
দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকায় হিলিতেও লকডাউনের কারণে বাজারে দোকানপাট খুলছে না। মানুষজনও খুব একটা আসছে না কেনাকাটা করতে। কাপড়ের দোকানগুলো বন্ধ। ফলে কাজ কমে যাওয়ায় আয় কমে বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথে বসা দর্জিরা। মাঝেমধ্যে ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আয় হলেও কোনো কোনো দিন খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া লোনের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়তি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিলি বাজারে সাতজন দর্জি রয়েছেন। তারা ফুটপাথে বসে বিভিন্ন ধরনের সেলাইয়ের কাজ করেন। নতুন লুঙ্গি সেলাই, মশারি সেলাই, পুরনো পোশাকের ছেড়াফাটা রিপু করেন। কিন্তু করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউন চলার কারণে মানুষজনের আসা যেমন কমেছে তেমনি দোকানপাট না খোলায় কাজ প্রায় বন্ধ। এখন অনেক দর্জি নিয়মিত বসেন না ফুটপাথে। দুয়েক জন দর্জি কাজের আশায় এলেও দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের।
দর্জি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা তো এখন না খেয়ে মরছি। পেট তো আর লকডাউন মানে না। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কিন্তু কামাই রোজগার নেই। যার কারণে চাল-ডাল কিনতে পারছি না। এর কোনো বিধিব্যবস্থা থাকলে আমাদের বলেন। যে এই কাজ বাদ দিয়ে অন্য কাজ করেন সেই ব্যবস্থা করে দেন। যে কাজ করি আমরা এখন তো লকডাউনের সেই কাজ বন্ধ। যার কারণে আমরা না খেয়ে মরছি এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আগে তো সারাদিন কাজ কাম করে ৪-৫শ টাকা আয় হতো। এখন তো কামাই রোজগার একেবারে নেই।
আব্দুল খালেক নামের আরেক দর্জি বলেন, আগে কাজ ভালোই হতো। গড়ে প্রতিদিন ৪-৫শ টাকা ইনকাম হতো। তাই দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাসহ আমাদের সংসার মোটামুটিভাবে চলত। কিন্তু এখন ৩০-৪০ টাকা করেও পাই না। সংসার তো আর চলছে না। লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ মানুষজন তেমন আসতে পারছে না কাজ হবে কোথা থেকে। কিছু দোকান চুরি করে খুললেও সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকে কখন যে ইউএনও ঢোকে। যার কারণে দোকানগুলোয় বেচাকেনাও হচ্ছে না। মানুষের কাছে ধার দেনা করে অনেক কষ্ট করে কোনোরকম করে সংসার চলছে। কিন্তু এটাকে চলা বলে না। এর ওপর বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নেওয়া আছে তারা কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা তো আর লকডাউন মানছে না।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বলেন, পৌরসভাকেন্দ্রিক কর্মহীনদের জন্য ১০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে যেটি পৌরসভার মাধ্যমে শিগগিরই বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ৫শ প্যাকেট ত্রাণ প্রস্তুত করেছি যাতে চাল, ডাল, লবণ, তেল রয়েছে। শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র দোকানি যারা রয়েছে তাদের এই সহায়তার মধ্যে আনা হবে।
Leave a Reply