
রাতে জন্ম নেওয়া মৃত সন্তানের লাশ দাফনের জন্য সকালে গ্রামে ছুটে যান আশরাফুল আলম। বেলা ১১টা নাগাদ লাশ দাফন করেন। এর ঘণ্টা দুয়েকের মাথায় তিনি ফোনে জানতে পারেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী রহিমা খাতুনও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রহিমা খাতুনের (৩৫) এক সপ্তাহ আগে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। এরপর শুক্রবার বিকালের দিকে মারা যান রহিমা খাতুন। এ সময় তাঁর পাশে ভাই আশরাফুল আলম ও বোন হাজেরা খাতুন ছিলেন।
রহিমা খাতুনের স্বামী আশরাফুল আলম মৌসুমী ব্যবসায়ী। রহিমা মিরপুর উপজেলার হালসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। লাশ হালসা গ্রামে দাফন করা হয়।
বোনের মৃত্যুর পর হাজেরা খাতুন হাসপাতালে থাকার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন আর কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার আমার বোনটা ভালো ছিল, খাবার খেয়েছিল। আজ চলে গেল, সঙ্গে বাচ্চাটাও। কিছুই রইল না আর।’
বোনের মরদেহ ট্রলিতে করে হাসপাতাল থেকে বের করার সময় ভাই আশরাফুল আলম বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করলাম, কাউকে ধরে রাখতে পারলাম না। বোনজামাই আশরাফুল তাঁর সন্তানকে দাফন করতে গিয়েছিলেন। এরপর বোনের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন।’
এর আগে রহিমার স্বামী আশরাফুল আলম জানান, ২০ জুলাই জ্বরসহ করোনার কিছু উপসর্গ দেখা দেয় রহিমার শরীরে। ২৩ জুলাই তাঁকে করোনা হাসপাতালে আনা হয়। নমুনা দেওয়ার পর পজিটিভ শনাক্ত হলে তাঁকে দ্রুত ওয়ার্ডে ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া হয়। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে পেয়িং ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ছিলেন চিকিৎসক মো. আবদুল্লাহ। তিনি জানান, রাত ১০টার দিকে হঠাৎ রহিমা খাতুন পেটে ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গে গাইনি চিকিৎসক সুস্মিতা পাল ও মনোরমা সরকারকে জানানো হয়। তাঁরা দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন। এরই মধ্যে রহিমার ব্যথা তীব্র হলে তাঁকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তাৎক্ষণিকভাবে দক্ষ নার্স ও আয়ারা ওয়ার্ডের ভেতর কাপড় দিয়ে ঘিরে তাঁর প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুত্রসন্তান প্রসব করেন রহিমা। তবে সন্তানটি মৃত ছিল।
শুক্রবার কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালের পেয়িং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাসমিনা তাবাসসুম বলেন, প্রসূতির শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা শুক্রবার সকালে ৫৫ থেকে ৬০এ ওঠানামা করছিল। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলায় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। তাঁকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আক্রামুজ্জামান মিন্টু বলেন, করোনায় আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসা দেওয়া একটু কঠিন। রহিমা ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। অক্সিজেনসহ তাঁর বিভিন্ন ধরনের ওষুধ চলছিল। এতে সাধারণত বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। তারপরও চেষ্টা চালানো হয়েছিল। এ ছাড়া মায়ের উচ্চরক্তচাপ ছিল।
Leave a Reply