হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশানের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, বিদেশি মুদ্রা, চাকু, মোবাইল সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, এটিএম কার্ড ও হরিণের চামড়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে তাকে আটক করা হয় বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক ইমরান খান। তা ছাড়া র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানিয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা দেশ রুপান্তরকে বলেন, আজ তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হবে। থানায় হস্তান্তর করে রিমান্ড চেয়ে বিকেল নাগাদ আদালতে পাঠানো হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর ‘রিচমন্ড’ ওই বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ অবৈধ জিনিস উদ্ধার করা হয়। কোথা থেকে এই মাদক আসলো সেসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযান শেষে তাকে আটক করে র‌্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ (শুক্রবার) তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

গুলশানের রিচমন্ড এর ৬ তলা ভবনের ৫ম তলার নিজ ফ্ল্যাটে থাকেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। রাত সাড়ে ৮টায় অভিযানের শুরুর দুই ঘণ্টা পরে র‌্যাবের কিছু নারী সদস্যকে ‘রিচমন্ড’ এর ওই ভবনে ঠুকতে দেখা যায়। তবে কোনো মিডিয়া কর্মীকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় ঠুকতে দেওয়া হয়নি। এর পর রাত ১২টা ১০ মিনিটে হেলানাকে নিয়ে ওই বাসা থেকে বের হন র‌্যাব সদস্যরা। এই সময় তাকে খুব হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। দুই হাত নেড়ে শুভেচ্ছাও জানান হেলেনা।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ২৫ জুলাই দলটির মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যসচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জানা গেছে, নামের সঙ্গে লীগ যুক্ত করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের অননুমোদিত একটি সংগঠনের সভাপতি পদে নাম আসার পর তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি। জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সম্প্রতি ফেইসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠন। নামসর্বস্ব এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনির। তাদের নামসংবলিত পোস্টারে ছেয়ে যায় ফেইসবুক। পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। চাকরিজীবী লীগের নেতা বানানোর ঘোষণা নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড়ের পর কঠোর অবস্থানে যায় শাসক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নামসর্বস্ব এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। এরপরই গতকাল রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় র‌্যাবের অভিযান পরিচালিত হলো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.