আম কূটনীতি ধরবে অর্থনৈতিক বাজার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পুরোনো ছবি।

কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে সুস্বাদু আম উপহারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার বেড়েছে পরিসর। বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে রসালো ফল আম ভাগাভাগি করে নেওয়ার উদ্যোগ আপাতদৃষ্টিতে ‘আম কূটনীতি’ বলা হলেও এসব দেশে বাজার ধরার লক্ষ্য বাংলাদেশের। গেল কদিনে ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে আম উপহার পাঠানো হয়। আম পাঠানো হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ব্রুনাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে বাংলাদেশের মিশন রয়েছে, সেসব দেশে।

সূত্র জানায়, আম পাঠানোর তালিকায় রয়েছে- মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ। আম কূটনীতির পেছনে সরকারের কেবল কূটনৈতিক রীতিই নয়, বিদেশে বাংলাদেশের রসালো ফল আমের বাজার ধরার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কিছু দেশে উপহার হিসেবে আম পাঠানো হচ্ছে। আর কিছু দেশে পাঠানো হচ্ছে আমের বাজার ধরার জন্য। ফলে আম কূটনীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই হাজার ৬০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম উপহার পাঠানোর মাধ্যমে শুরু হয় ‘আম কূটনীতি’। বাদ যাননি বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরাও। শেখ হাসিনার আম উপহার পৌঁছেছে ত্রিপুরার বিপ্লব দেব, মেঘালয়ের কনরাড সাংমা আর আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার কাছেও। ফলে দিল্লি থেকে কলকাতা, গুয়াহাটি থেকে শিলং বা আগরতলা সর্বত্রই হাঁড়িভাঙার অনন্য স্বাদ আর অপূর্ব সুবাস পৌঁছেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে বলেন, শুধু ভারত নয়, আমাদের প্রতিবেশী সব দেশসহ চীন, মধ্যপ্রাচ্য, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে আম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটিকে কি ‘আম কূটনীতি’ বলছেন- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ তা বলতে পারেন। এবার এমনিতেই আমের ফলন বেশি। আমরা খুব লাকি। এ বছর আমাদের আম খুব ভালো হয়েছে। আর হাঁড়িভাঙা আম খুবই উন্নতমানের। কিন্তু এর পরিচিতি কম। এ বছরটা আমাদের জন্য উল্লেখযোগ্য বছর। কারণ এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ পালন করেছি। এই মহামারীর মধ্যেই অনেক দেশের বন্ধুরা এসেছেন এবং অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আমরা তাদের উপহার হিসেবে আম পাঠিয়েছি। আমাদের হ্যাপিনেস তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। এতে সম্পর্ক উন্নত হয়।

মন্ত্রী বলেন, ভারত ছাড়াও কয়েকটি দেশে আমরা আম দিয়েছি। বিশেষ করে যেসব দেশে আমাদের অনেক ভাইবোন থাকেন। যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য রয়েছে। এত ভালো আম আমাদের, কিন্তু তারা দেশ থেকে আম নেয় না। এখন তাদের দিয়েছি, তারা খেয়ে দেখুক। ভালো মনে করলে আমাদের কাছ থেকে কিনবে। আমরা প্রত্যেক দেশে অনেক আম পাঠিয়েছি; যেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আম খেতে পারেন। উনারা খেয়ে যদি আমের সুনাম করেন, তা হলে সে দেশে আমাদের বাজার সৃষ্টি হবে। আমাদের তো অনেক আম আছে, অভাব নেই। কূটনৈতিক আচারে উপহার পাঠানোর রীতি আছে। এবার আমাদের ফল-ফসল পাঠাচ্ছি। আগেও অন্যদের আম দিয়েছি। নরেন্দ্র মোদি এই আম পেয়ে চিঠি লিখেছেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী খুশি হয়ে আনারস পাঠিয়েছেন। আমরাও খুশি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, রাজা-বাদশা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপহারের আমের মধ্যে রয়েছে মূলত হাঁড়িভাঙা আম। রংপুর এলাকার বিখ্যাত আম হাঁড়িভাঙা অত্যন্ত সুস্বাদু। এই হাঁড়িভাঙা আমই বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাদের পাঠানো হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের আম হওয়ায় ভারতীয় গণমাধ্যম এই জাতের আমকে প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির আম হিসেবে উল্লেখ করেছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.