এলো ত্যাগ মহিমার ঈদ

মহামারি করোনার মধ্যেই বছর ঘুরে আবার এলো ত্যাগ ও মহিমার ঈদ- পবিত্র ঈদুল আজহা। মহামারি থেকে মুক্তির আশায়, আর বিশ্বশান্তির স্বপ্ন নিয়ে স্রষ্টার কাছে দুহাত তুলে কাতর প্রার্থনা জানাবেন দেশ ও বিশ্বের সর্বস্তরের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। আজ বুধবার (২১ জুলাই) সারাদেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হবে পবিত্র এই দিনটি।

এরই মধ্যে চলমান মহামারিতে সারা পৃথিবীতে ৪১ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ১৯ কোটির বেশি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অবস্থাও টালমাটাল। এমন এক কঠিন সময়ে মুসলমানদের দোড়গোড়ায় হাজির হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা।

আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির কারণে আতঙ্ক-উদ্বেগের মধ্যেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কুরবানির পশু কেনা ও ঈদের নামাজসহ অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য সরকার চলমান করোনা বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করে। তবে ঘরমুখী লাখ লাখ মানুষের ঘরে চলাচল, গণপরিবহন ও পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও দোকান-শপিংমল ভিড় করে কেনাকাটার কারণে সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, করোনা চলাকালে অনেকে স্বজন হারিয়েছেন বা অসুস্থতায় ভুগছেন, অর্থনৈতিক মন্দা ও লকডাউনের কারণে অসংখ্য মানুষের কাজ হারানো বা আয় কমে যাওয়ার কারণে তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ অনুপস্থিত। এই প্রেক্ষাপটে এবারের ঈদুল আজহা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

ঈদুল আজহা আমাদের দেশে ‘কুরবানির ঈদ’ নামেই বেশি পরিচিত। কেউ কেউ এই ঈদকে বকরি ঈদ হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। সে অনুসারে পশু কেনা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়াসহ ঈদের সব পস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। কুরবানির পশু কেনার পর্বও শেষ করেছেন অনেকেই। পশুর যত্ম-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। ইতোমধ্যে সারাদেশে জমে উঠেছে কুরবানির পশুর হাট। রাজধানী ঢাকায় ক্যাটল ট্রেন, ট্রলার ও ট্রাকে করে কুরবানির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট আনা হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। রাজধানীর কুরবানিদাতারা পছন্দের পশুটি কেনার জন্য গাবতলীর প্রধান হাটসহ সুবিধামতো বিভিন্ন হাটে যাচ্ছেন।

রাজধানীতে অনেকেই কুরবানির পশু কিনে নিজ নিজ বাসভবনের কার পার্কিং ও সামনের ফুটপাতে রেখেছেন। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে বিকোচ্ছে তাজা কাঁঠালপাতা, খড়-বিচালি-ভুসি ইত্যাদি। গলায় রঙিন কাগজ ও জরির মালা জড়ানো হৃষ্টপুষ্ট ষাঁড় দড়ি ধরে ঘরমুখো চলছেন কুরবানিদাতারা। গবাদিপশুর ডাকও বেশ শোনা যাচ্ছে এখানে ওখানে।

হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কুরবানি দিয়ে থাকেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানির জন্য মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কুরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই। আল্লাহপাক তাকেই কুরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহতাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কুরবানি করতে উদ্যত হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহতাআলার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইলের (আ.) পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। কাল ঈদের নামাজের জামাতের আগে খুতবায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইলের (আ.) কুরবানির এই কাহিনি তুলে ধরবেন ইমামরা। বিনম্র চিত্তে তাদের স্মরণ করবেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।

কুরবানি দেয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কুরবানি করার বিধান রয়েছে। সাধারণত পশুই কুরবানি করার বিধান রয়েছে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য। ঈদের জামাত আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কুরবানির জন্য। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা করা হবে। প্রার্থনা করা হবে করোনা থেকে মুক্তির জন্যও।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.