সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র

করোনা

করোনার প্রকোপে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। এই সুযোগে রাজধানীর অখ্যাত হাসপাতালগুলোয় দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে এসব হাসপাতালে রোগীকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে। আর পেছনে রয়েছে সরকারী হাসপাতালের কতিপয় দুর্নীতিবাজ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। আর করোনাকে পুঁিজ করে অখ্যাত হাসপাতালে রোগী আনার নামে আগেই শুরু হয় দামাদামী। লাখ টাকার রোগী আনতে পারলে দালালদের ২০ হাজার টাকা বা আসন্ন ঈদে কোরবানির গরু দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা ও বিভিন্ন জেলার দালালদের সঙ্গে এ্যাম্বুলেন্স দালাল চক্রেরও যোগসাজশ রয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামলীতে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের অন্যতম হোতা সাহাদৎ হোসেন মামুনসহ (৪৬) চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তার সহযোগীরা হচ্ছে ওই হাসপাতালের স্টাফ মহিন উদ্দিন মামুন (৪৬), রহমত উল্লাহ (৩২) ও আকরাম হোসেন (৫২)। এ সময় এই চক্রের হোতা সাহাদতের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার জাল নোট ও ৫৫০ ইয়াবাও জব্দ করা হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক খন্দকার সাইফুল আলম এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, মহামারীর সুযোগে এক শ্রেণীর দালাল চক্র রাজধানীর কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তর করে হেনস্থা করছে। অধিনায়ক খন্দকার সাইফুর আলম জানান, অনেক ক্ষেত্রে এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চ ভাড়ায় ঢাকার বাইরের রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমেও কমিশন পাচ্ছে। র‌্যাব-২ এর ছায়া তদন্তে উঠে আসে দালাল চক্রের হোতা সাহাদত হোসেন ওরফে মামুনের নাম। জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্তে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসার নাম করে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী নিয়ে আসে। এর সঙ্গে সরকারী হাসপাতালের কতিপয় দুর্নীতিবাজ চিকিৎসক, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা জড়িত। এভাবে যোগাসাজশে দালালরা সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে তাদের অখ্যাত হাসপাতালে এনে আইসিইউতে ভর্তি, চেকআপের নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। চক্রটির কৌশল সম্পর্কে র‌্যাব-২ এর এই কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে তারা রোগী নিয়ে আসত। এক্ষেত্রে জেলা শহরের এ্যাম্বুলেন্স চালক এবং হাসপাতালের দালাল রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কোন কোন দালাল ও এ্যাম্বুলেন্স চালককে কোরবানির গরুর প্রলোভন দেয়ার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। স্থানীয় ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঢাকার হাপাতালের সিন্ডিকেট ও মপ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও জড়িত। গ্রেফতারকৃত দালাল চক্রের হোতা সাহাদশ হোসেন মামুনের বিষয়ে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক সাইফুল আলম জানান, মামুন খুলনা অঞ্চলের বহুল আলোচিত ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি এরশাদ সিকদারের সহযোগী হিসেবে কাজ করত বলে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে এরশাদ সিকদারের ফাঁসির পর মামুন ঢাকায় এসে নানা ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.