আমি লাশ চাই, বিচার চাই

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে নিহত নবীগঞ্জের অমৃতা বেগমের মা আনোয়ারা বেগমের বিলাপ থামছেই না। তার কান্না ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।

ও অমৃতা রে, এখন কই তুই মা? ও আল্লাহ, তুই ছাড়া এখন আমরার কেউ নাই। আমাদেরকে আর কে দেখবে মা, আমার বুকে ফিরে আয় মা। এমন আহাজারি করছিলেন অমৃতা বেগমের মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, আমি লাশ চাই, বিচার চাই।

নবীগঞ্জের বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মোতালিব মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমগ। অমৃতা বেগমের (৩০) স্বামী রিক্সা চালান নারায়ণগঞ্জে। শুক্রবার রাতে মায়ের সঙ্গে শেষ বারের মতো মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল অমৃতার। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এখন মায়ের একটাই কথা, আমি আর কিছু চাই না, আমি শুধু আমার মেয়ের লাশ চাই। এর বিচার চাই।

আনোয়ার বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী পঙ্গু। তিন মেয়ে ও এক ছেলের সংসার। অমৃতার টাকায় চলতেন তারা। প্রায়ই টাকা দিয়ে পরিবারকে সহযোগীতা করতেন। ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুবাধে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে তারা নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ার ভোলাকান্দা নতুন বাজার (দক্ষিণ পাড়ার) হাবিব মিয়ার বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।

তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে অমৃতা। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা সংসার নিয়ে থাকেন। শত বাঁধার মধ্যেও নিজের সংসারের পাশাপাশি চালাতেন বাবা-মার সংসার। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে সংসারের হাল ধরেছিলেন অমৃতা। সংসারের হাল ধরতে ৫ হাজার ৭০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন গত জুন মাসে হাসেম ফুড লিমিটেডে। সুমা নামে সাত বছরের এক মেয়ে আছে। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত আনোয়ারা বেগম।

কথাগুলো শেষ না হতেই ঢুকরে কেঁদে ওঠেন আনোয়ার বেগম। কেঁদে কেঁদে বলেন, দূর্ঘটনার আগের দিন তাকে ফোন দিয়েছিল অমৃতা। আগামী কোরবানির ঈদে বাড়ি আসার কথা বলেছিল। সবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসবে। এবার সবাইকে নিয়ে বাড়িতে ঈদ করবে। জবাবে মা বললেন, মারে আমার কিছু লাগবো না মা, তুই আমার বুকে ফিইরা আয়। তুই ছাড়া আমাদেরকে কে দেখবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.