করোনা মোকাবিলায় নেওয়া ব্যবস্থা অপ্রতুল

করোনা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের গৃহীত ব্যবস্থাকে অপ্রতুল ও চলমান সংকট সমাধানের উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেছেন, করোনা মোকাবিলার ব্যাপারে

প্রস্তুতি নিতে দায়িত্বশীলরা বিলম্ব করেছে এবং করছে। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমানোর জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় আগামীতে আরও খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে অধ্যাপক মোজাহেরুল এসব কথা বলেন।

বিগত এক সপ্তাহ ধরে চলমান সর্বাত্মক লকডাউন এবং এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোজাহেরুল হক বলেন, লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য মানুষের চলাচল সীমিত করা। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো এই লকডাউনের মধ্যেও রাস্তাঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে প্রচুর মানুষ চলাচল করছে। ফলে লকডাউনের উদ্দেশ্য আংশিক সফল হচ্ছে, পুরোপুরি নয়। মানুষকে তার অবস্থানে রেখে চলাচল বন্ধ বা একেবারে সীমিত করে করোনা নিয়ন্ত্রণের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে নিশ্চিত করতে হবে মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। জরুরি প্রয়োজনে যেসব প্রতিষ্ঠান, যেমন নিত্যপণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল খোলা থাকবে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। লকডাউনের পাশাপাশি কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে সন্দেহভাজনদের। এ জন্য এলাকার বন্ধ স্কুল, কলেজে সরকারি কোয়ারেন্টিন সেন্টার খুলে সেখানে থাকা সন্দেহভাজনদের র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। এতে যাদের পজিটিভ পাওয়া যাবে, তাদের আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে চিকিৎসার জন্য। নিকটস্থ জেলা হাসপাতালে নিয়ে সম্ভব হলে আরটিপিসিআির টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করলে সবাই শনাক্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা বা জেলা হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে এসব টেস্ট ও চিকিৎসা দেওয়া যায়। মৃত্যুহার কমানোর জন্য যাদের বয়স ৬০ বা তার ওপরে তাদের জেলা সদর হাসপাতাল বিশেষ করে যেখানে আইসিইউর ব্যবস্থা আছে, সেখানে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। কারণ বয়স্কদের আরও নানা জটিলতা থাকে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে ওয়ার্ড/ইউনিয়ন অনুযায়ী ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মৃত্যু হার কমবে। লকডাউনের পাশপাশি এসব পদক্ষেপ না নিলে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেরি হবে সফলতা আসতে।

জনগণকে সম্পৃক্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণের কৌশলগত পরিকল্পনা জনগণকে জানাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। যেমন জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় জনপ্রতিনিধি বা মেম্বারসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেত। তা হলে স্বাস্থ্যবিধি মানানোটা যেমন সহজ হতো, তেমনি সরকারও সফল হতো আর জনগণের ভোগান্তি কমতো।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.