ঢাকাকে কীভাবে বাসযোগ্য করা সম্ভব

ঢাকা বাসযোগ্যতা হারিয়েছে অনেক আগেই। এজন্য অপরিকল্পিত ও অপরিছন্নভাবে নগরায়নকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)সহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় বার বার উঠে এসেছে ঢাকার নাম। প্রতিবারের মতো চলতি বছরেও বাসযোগ্যতার তলানিতে স্থান পেয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরটি। ১৪০টি দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। এদিকে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, শিল্পকারখানাসহ ছোট-বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। মানুষ সৃষ্ট ময়লা-আবর্জনা, যানবাহনের সংকট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ভয়াবহ যানজট, পয়ঃনিষ্কাশনের করুণ অবস্থা, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাটের করুণ দশা পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উন্নয়নমূলক কাজের সমন্বয় না থাকায় পিছিয়ে পড়ছে ঢাকা। ঢাকাকে রক্ষা করতে হলে এখনি নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে।

এজন্য প্রয়োজন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা আর সদিচ্ছা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকা সিটিকে রক্ষায় সবার এগিয়ে আসতে হবে। দর্শন আরো বাড়াতে হবে। আগামী ২০ বছর পর ঢাকাকে কেমন দেখতে চাই, সেই লক্ষ্যে এখন থেকে কাজ করতে হবে। নির্মাণকাজে এক একটি সংস্থার সঙ্গে অন্যটির সমন্বয় করে কাজ নিদিষ্ট সময়ে শেষ করতে হবে। ঘনবসতি কমাতে হবে। শহরমুখী জনগণকে ঠেকাতে হবে। এজন্য দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, যেকোনো দেশের শহর রক্ষায় বৃক্ষায়নের বিকল্প নেই। ঢাকা শহরে বৃক্ষের সংখ্যা কমে গেছে। নগরায়ন করতে গিয়ে বৃক্ষশূন্য করে দেয়া হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে। দূষণ কমাতে হবে। ট্রাফিক সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। সড়কে যানচলাচলের যে আইন আছে তা বাস্তবে প্রয়োগের বিকল্প নেই। এছাড়া পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ সবকিছুকে একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চালাতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য শহরের তলানি থেকে উত্তরণ ঘটাতে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগী হতে হবে। করপোরেশনের উদ্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ড উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক নাগরিক সুবিধাদি তৈরি, খেলার মাঠ-পার্ক-জলাশয় তৈরি ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া এবং স্থানীয় জনমানুষকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষণ ও দখলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পাশাপাশি ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ল্যান্ড রি-অ্যাডজাস্টমেন্ট বা ভূমি পূনঃসমন্বয়, ভূমি ব্যাংক তৈরি- প্রভৃতি কৌশল অবলম্বন করে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সম্প্রসারিত নগর এলাকা তথা ঢাকার নতুন ওয়ার্ডের জন্য সিটি করপোরেশনসমূহ পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। সর্বোপরি, ঢাকার জনসংখ্যা সুনির্দিষ্ট করার মাধ্যমে তদনুযায়ী অবকাঠামো, সুবিধাদি ও পরিকল্পনা করার মাধ্যমেই ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। ছোট একটু জায়গায় আড়াই কোটি লোক থাকলে এই শহর কখনো বাসযোগ্য হয়ে উঠবে না। ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকারখানা, হাসপাতালগুলো স্থানান্তর করতে হবে। আবাসিক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিল্পকারখানা করতে দেয়া যাবে না। পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, পানির লাইন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থা আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। রাস্তায় পার্কিং করা ঠেকাতে হবে। রাজধানীতে ব্যাপক হারে চলছে নির্মাণ কাজ, এগুলো সমন্বয় করে করতে হবে। ঢাকার চারপাশের ইটভাটা থেকে নিঃসরিত হচ্ছে কার্বন। এগুলোকে রোধ করতে হবে। প্রয়োজনে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। সূত্রঃ মানবজমিন

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.