বিচ্ছিন্ন ঢাকা: এটাই কি সমাধান?

লকডাউন

ঢাকা বিচ্ছিন্ন। সাত জেলায় লকডাউন। থমকে গেছে পুরো দেশ। সরকারের কঠোরতায় পথে পথে আটকে গেছে মানুষ। কিন্তু করোনা আটকানো সম্ভব হচ্ছে কি-না দেশের বড় অংশ থেকে এ প্রশ্ন উঠেছে। তারা বলছেন, দেশ বিচ্ছিন্ন হলেও এখনো সীমান্ত বিচ্ছিন্ন হয়নি। মানুষের মাঝে সতর্কতা বাড়েনি। বিমান, সমুদ্র, স্থলবন্দর ও রেলস্টেশন হয়ে এখনো ঢুকছে মানুষ। অন্যদিকে কেউ মানছে না বিধিনিষেধ। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়েই মানুষকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ এমন লকডাউনে অসন্তোষ দেশের বড় একটি অংশের। বলা হচ্ছে, লকডাউন কোনো সমাধান নয়। মানুষের মাঝে সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণা বাড়াতে হবে, সীমান্তে কঠোরতা বাড়াতে হবে, মানুষের জন্য চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের সহযোগিতায় অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই করোনো মোকাবিলা করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন।

সাত জেলায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কার্যত গোটা দেশকেই ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রাজধানীর সঙ্গে দেশের সকল এলাকার দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই দূরপাল্লার গণপরিবহন ও লঞ্চ বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্য জেলায় লকডাউন না থাকলেও সেখানকার বাসিন্দারা বিকল্প উপায়ে ঢাকায় পৌঁছার চেষ্টা করলে তাদের এই সাত জেলায় ঠেকিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এভাবেই ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা দেশ থেকে। এর প্রভাব পড়েছে সারা দেশের জনজীবনেই। ঢাকানির্ভর জীবিকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে ঢাকায় পৌঁছবেন— সরকারের পক্ষ থেকে তার কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় কঠিন ভোগান্তি ও দুর্দশার শিকার হচ্ছে মানুষ। ফেনী থেকে ঢাকায় পৌঁছা প্রকাশ কায়েফ বলেন, ‘আড়াই ঘণ্টার পথ ঢাকায় পৌঁছতে প্রায় ১০ ঘণ্টা লেগেছে। ফেনী থেকে কুমিল্লা বিশ্বরোধ আসতে পারলেও পথে পুলিশ গাড়ি আটকিয়ে দেয়। এরপর দুই-তিনভাবে ভেঙে দাউদপুর। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা হেঁটে মুন্সিগঞ্জের কাছে আসি। এরপর ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ, সেখান থেকে ঢাকায়।’

এদিকে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মৃত্যুও। এ পরিস্থিতেও দেশের ভারতীয় কাঁটাতারে ঘুরছে কৃষকরা, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দৃশ্য। সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে বিমান, সমুদ্র, স্থলবন্দর ও রেলস্টেশন হয়ে এখনো ঢুকছে মানুষ। করোনার শুরু থেকে ২৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষ বিভিন্ন স্থান হয়ে দেশে ঢুকেছে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও চার হাজার ৩৬৭ জন দেশে ঢুকেছে। বিমানবন্দর হয়ে তিন হাজার ৮৬২ জন, স্থলবন্দর হয়ে ৩৫৫ জন ও সমুদ্রবন্দর হয়ে ১৫০ জন ঢুকেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমরা যদি লকডাউন ফলো করি কোনো ফলাফল আনবে না। কারণ আমরা শুরু থেকে মানুষকে লকডাউন করার চেষ্টা করেছি করোনাকে লকডাউন করার চেষ্টা করিনি। যদি করোনা আটকে দেয়ার চেষ্টা হতো তাহলে দেশে এখনকার যে পরিস্থিতি রয়েছে সেটি হতো না ‘নিঃসন্দেহে করোনা ইস্যুতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়ে যাচ্ছে। সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এ দেশের অর্থাৎ রাষ্ট্রের কন্ট্রোল দুর্বল। বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, ‘জুনে ৬০ হাজার ৬৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন বিভাগে করোনা পরিস্থিতির অনেক অবনতি ঘটেছে। বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রংপুরে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে এই এক সপ্তাহে।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এখন জনগণের সহযোগিতা ও সতর্কতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সরকার যে নির্দেশনা দেবে সেটা যদি মানা হয়, তাহলে কিছুটা হলেও আমরা উপকৃত হতে পারবো বলে মনে হচ্ছে।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.