
বর্ষা যেন কবি-সাহিত্যিকদের ঋতু। বৃষ্টি নিয়ে দুই লাইন হলেও লেখেননি বাংলায়- এমন লেখকের খোঁজ মেলা ভার। বর্ষা কখনো করে আবেগী, কখনো করে মুগ্ধ, কখনো বা করে স্মৃতিকাতর। বৃষ্টি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদও লিখেছেন, ‘যদি মন কাদে চলে এসো এক বর্ষায়।’ কিন্তু এই বর্ষার বৃষ্টি আর কাদা পেরিয়ে আসাটাও বেশ বিড়ম্বনার। বর্ষার বিড়ম্বনাতেও কী করে নিজেকে ফ্রেশ রাখবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিউটি এক্সপার্ট ও জারা’স বিউটি লাউঞ্জের সিইও ফারহানা রুমি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন পূর্বা জান্নাত ঋতুর পালাবদলের সঙ্গে মনেরও বদল হয়। তবে আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকের পরিবর্তন হয়। বিউটি এক্সপার্ট ফারহানা রুমি বলেন, ‘বর্ষা মানেই এর প্রকোপে আপনার হাত আর পায়ের ক্ষেত্রে ত্বকের নানা সংক্রমণ দ্বিগুণ জোরদার হয়। ঠিক এ কারণেই তাদের চাই এই বৃষ্টির মাসগুলোয় নিজের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হয়। হাত-পায়ের পরিচ্ছন্নতা আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ করে। কোমল ও সুন্দর হাত-পা পেতে প্রতি মাসে ২ বার হাত-পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।’
হাত-পায়ের জন্য একটু সময় হালকা কুসুম গরম পানিতে লবণ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে হাত ভিজিয়ে রাখুন। ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর যে কোনো নরম ব্রাশ হালকাভাবে ঘষে নখ পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনে নখ কাটা ও নখ ফাইলও করতে পারেন। বাফার দিয়ে ঘষলে নখের গ্লেস ফিরে আসবে। যে কোনো প্যাক ৫-১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ক্রিম দিয়ে মাসাজ করে নিন। এভাবে যত্ন নিলে হাতের দাগ থাকবে না। ত্বক টানভাব থাকবে ও হাতের উজ্জ্বলতা বাড়বে। যাদের নখ ভাঙার সমস্যা আছে, তারা নখে রসুন ঘষলে অনেক উপকার পাবেন। বৃষ্টির পানি আপনার হাত-পায়ের নখকে শুষ্ক আর ভঙ্গুরও করে তোলে। কাজেই হাত-পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। নখ আর নখের ঠিক আশপাশের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ভালো করে ঘষে লাগিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার নখের আর্দ্রতা ঠিকঠাক বজায় থাকবে এবং নখ নরম থাকবে। হালকা গরম পানিতে ৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। হাতের মতো পায়েও একইভাবে পরিষ্কার করার পর পিউমিক স্টোন দিয়ে ঘষলে পা ফাটা কমবে। প্রথমে পা ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। এর পর প্যাক লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার স্ক্রাব দিয়েও পরিষ্কার করলে উপকার পাবেন। প্রতিদিন ক্র্যাক ক্রিম লাগালে পা ফাটা চলে যাবে। ভিটামিন ‘ই’যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
চুলেরও চাই বাড়তি যত্ন
বর্ষায় হুটহাট বৃষ্টি নামে আবার ভ্যাপসা গরমও পড়ে। মাথার ত্বক কখনো ঘামে ভিজে থাকে তো কখনো বৃষ্টির পানিতে। তা থেকে দেখা দেয় খুশকির। বর্ষায় খুশকি থেকে চুল ঝরা, চুল নির্জীব হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। খুশকির সমস্যার সমাধান না হলে খুশকি বৃদ্ধিসহ চুলের বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকশন চুল থেকে শরীরের ত্বকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একদিন পর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। খুশকি দূর করতে নারিকেল তেলের সঙ্গে কাস্টার অয়েল, ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল ও লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। বর্ষায় চুল সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করুন। বৃষ্টির পানি বেশিক্ষণ মাথায় থাকলে মাথার তালু ও চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। চুল পড়া রোধ করতে ২টি পাকা কলা, পরিমাণমতো টক দই ও কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন।
নিতে হবে ত্বকের যত্ন
ভ্যাপসা গরমে বারবার ঘেমে ত্বকে ময়লা জমে বেশি। বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের সমস্যা বেশি হয়। লোমকূপের ভেতর থেকে ময়লা দূর করতে সপ্তাহে দুইবার ত্বক স্ক্রাবিং করুন। চালের আটার সঙ্গে বাদাম গুঁড়া ও টক দই মিশিয়ে বাড়িতেই বানিয়ে নিন স্ক্রাব। বারবার পানির ঝাপটায় ত্বক ধুয়ে ফেলার অভ্যাস করুন। রাতে ঘুমানোর আগে ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন ত্বক। ভ্যাপসা গরমে ত্বক ঝরঝরে রাখতে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল। তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তারা গোলাপ জলের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে নিন। মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করবে।
Leave a Reply