
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বিপর্যয় হয়েছে। ২০২০ সালে এফডিআই কমেছে আগের বছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ। আর বাংলাদেশে কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সর্বশেষ বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান রয়েছে। প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।
আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত বছর বিনিয়োগ এসেছে ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৯ সালে এফডিআই এসেছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ২৪ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ২০২০ সাল শেষে মোট বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ডলার। যা এর আগের বছর শেষে ছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালে এফডিআই পেয়েছে ১ লাখ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৫ লাখ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে বিশ্বে এফডিআই ছিল দেড় লাখ কোটি ডলার। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু ভারত ছাড়া সব দেশের এফডিআই কমেছে। অন্যদিকে চীন ও হংকংয়ের কারণে সার্বিকভাবে এশিয়াতে বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে।
এফডিআই প্রবাহের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল হিসেবে এসেছে ৮৪২ মিলিয়ন ডলার, মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ (রি-ইনভেস্ট) হয়েছে এক হাজার ৫৬৬ মিলিয়ন ডলার ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ হিসেবে এসেছে ১৫৫ মিলিয়ন ডলার। তবে কয়েক বছর ধরে দেশে গ্রিন ফিল্ড বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। কয়েক বছরে তা প্রায় ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে এফডিআই প্রবাহে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ২০২০ সালে শীর্ষে রয়েছে কম্বোডিয়া। এশিয়া মহাদেশের এ দেশটিতেও গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে এক শতাংশ। এতে দেশটি তিন দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার এফডিআই পেয়েছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইথিওপিয়ার এফডিআই প্রবাহ ছিল গত বছর দুই দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে থাকা মোজাম্বিক ও মিয়ানমারে এফডিআই প্রবাহ ছিল যথাক্রমে দুই দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ও এক দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। আঙ্কটাডের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল ঢাকা টোব্যাকো অধিগ্রহণ। জাপান টোব্যাকোর ওই অধিগ্রহণের আর্থিক মূল্য ছিল দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি। ফলে সে বছর এফডিআই প্রবাহ ছিল তিন দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল দুই দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬ সালে দুই দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৫ সালে দুই দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।
যদিও বাংলাদেশে এফডিআই স্টক বাড়ছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, ২০০০ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের আন্তঃপ্রবাহের স্টক ছিল দুই দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় বিলিয়ন ডলার। আর গত বছর তা আরো বেড়ে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২০ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা ভারতে গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল ৬৪ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার। এ সময় দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে দুই দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার এফডিআই যায় গত বছর। দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো এক বিলিয়ন ডলার করেও এফডিআই পায়নি।
২০২০ সালে বিশ্বে মোট বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ছিল প্রায় ৯৯৮ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৯ সালে এ প্রবাহ ছিল এক দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮ সালের এ প্রবাহ ছিল এক দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন ডলার। করোনার প্রভাব না কাটলেও চলতি বছর বিশ্বব্যাপী এফডিআই কিছুটা বাড়বে বলে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আঙ্কটাড।
Leave a Reply