যেভাবে পাল্টাতে থাকে করোনা পরিস্থিতি

করোনা

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রথম সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় সীমান্তবর্তী সাত জেলায়। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারণে বেড়েছে পুরো রাজশাহী বিভাগের সংক্রমণ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দেশের বিভিন্ন জেলার সংক্রমণের হার। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, করোনার ঊর্ধ্বমুখী আচরণ দক্ষিণবঙ্গেও দেখা গেছে। সবশেষে এখন ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলায় বেড়েছে সংক্রমণ। তাই ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে এই বিভাগের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে এই লকডাউন ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

যেভাবে পাল্টাতে থাকে করোনা পরিস্থিতি

দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে গত মে মাসে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে ৮ জেলায়। এরমধ্যে অন্যতম ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এরপর সেখান থেকে পুরো রাজশাহী বিভাগে করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পর করোনা পরিস্থিতির অবনতির হতে থাকে সাতক্ষীরা জেলায়। সেখান থেকে পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটে পুরো খুলনা বিভাগের। গত এক সপ্তাহে মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই হয়েছে খুলনা বিভাগে। গত তিন দিন ধরে এই বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারও অন্য যেকোনও বিভাগের চেয়ে বেশি। তিন দিনে এ বিভাগে রোগী শনাক্তের হার ৩৪ শতাংশের ওপরে। খুলনা বিভাগের প্রায় সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় সংক্রমণ বেড়েছে।

এরপর পরিস্থিতি পাল্টায় রংপুর বিভাগে। এই বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরে বাড়তে থাকে করোনা রোগী। এরমধ্যে দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বাড়ে। দিনাজপুরের সঙ্গে বাড়তে থাকে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা রোগী। এরপর ঢাকা বিভাগেও দেখা দেয় করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ। এই বিভাগের ফরিদপুরে প্রথমে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এরপর গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং রাজবাড়িতে বেড়ে যায় শনাক্তের হার।

মৃত্যু বেড়েছে

ঈদের পর দেশে সংক্রমণের ৬৩তম সপ্তাহ (১৬ থেকে ২২ মে) থেকে নতুন রোগী ক্রমে বাড়তে শুরু করে। আর মৃত্যু বাড়তে শুরু করে ৬৫তম সপ্তাহ (৩০ মে-৫ জুন) থেকে। এত দিন প্রতি সপ্তাহে নতুন শনাক্ত ও মৃত্যু বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশের নিচে ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত শনিবার (১৯ জুন) শেষ হওয়া সংক্রমণের ৬৭তম সপ্তাহে (১৩-১৯ জুন) নতুন রোগী বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। এই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।

পরীক্ষা বাড়ালেই পজিটিভ রোগী বাড়ে

গত এক সপ্তাহে করোনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় করোনা পরীক্ষা সামান্য বাড়লেই তাতে রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। আবার কোনও কোনও জেলায় কম নমুনা পরীক্ষার বিপরীতেও অধিক রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকায় বেড়েছে শনাক্ত ও মৃত্যু

রাজধানী ঢাকায় করোনা শনাক্তের হার নিম্নমুখী থাকলেও তা বেড়েছে শনিবার (১৯ জুন) থেকে। তার আগের দিন করোনা শনাক্ত ছিল ৪৭৩ জন। শনিবার শনাক্ত হয় ১ হাজার ১১৪ জন, রবিবার ৮২২ জন এবং আজ সোমবার শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৯৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষের। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৮ জন। তার আগের দিন (২০ জুন) মারা যান ৮২ জন। ঢাকায় মৃত্যুর হার বিগত ৫ দিন ধরে বাড়ছে। ৫ দিন আগেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ এর নিচে। গত ১৬ জুন ছিল ৮ জন, ১৭ জুন ১০ জন, ১৮ জুন ১২ জন, ১৯ জুন ১৪ জন, ২০ জুন ২১ জন এবং সোমার (২১ জুন) মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টার বিভাগভিত্তিক করোনা পরিস্থিতি

গত ২৪ ঘণ্টায় ৮টি বিভাগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই আছে ১ হাজার ২৯৪ জন, ময়মনসিংহে ১৪৩ জন, চট্টগ্রামে ৪৬১ জন, রাজশাহীতে ৭৯৯ জন, রংপুরে ২৫৭ জন, খুলনায় ৯৪৫ জন, বরিশালে ১১৭ জন ও সিলেটে ৭৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলায় সংক্রমণের হার উচ্চ। এরপর আছে গোপালগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল। একইভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের শতকরা হারে শনাক্ত বান্দরবানে বেশি। যদিও সেখানে নমুনা সংগ্রহ অত্যন্ত কম। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ‘আমরা যদি বেশি সংখ্যক রোগীর কথা বিবেচনা করি, তাহলে চট্টগ্রাম জেলায় সংক্রমণের হার বেশি। এর পাশাপাশি কুমিল্লা জেলায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে কম, কিন্তু শতকরা হিসাবে সেখানে শনাক্তের হার অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি। রাজশাহী এবং খুলনা হচ্ছে এই মুহূর্তে আমাদের উদ্বেগের জায়গা। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এই পরিস্থিতির আশু কোনও উন্নতি আমরা দেখছি না।’

ঢাকার কাছাকাছি করোনা চলে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধীরে ধীরে ঢাকার দিকে আসছে, ঢাকাকে বাঁচাতে আশেপাশের ৭ জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ঝুঁকিতে আছে।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.