ভয়ংকর ‘খরা অতিমারি’ জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি

খরা অতিমারি
Desert In Gujarat, India

করোনাপর্ব মেটেনি। এর মধ্যেই অন্য এক অতিমারির ছায়া ঘনাচ্ছে। হুঁশিয়ারি জাতিসংঘের। জাতিসংঘের একটি বিশেষ রিপোর্টে বলছে, এই অতিমারি হতে চলেছে খরার অতিমারি।

জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু ও ঋতুপর্বের পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ব্যবহার, অপচয় এবং ক্রমবর্ধমান জনঘনত্বের বিপদই এই আসন্ন অতিমারীর জন্য দায়ী হতে চলেছে। গত দু’দশকে অন্তত পক্ষে দেড়শ কোটি মানুষ ইতোধ্যে খরার প্রকোপে পড়েছেন। বিঘ্নিত হয়েছে অর্থনীতি।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদন বলছে, পৃথিবীর বিশেষ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমছে বলে খরা তরান্বিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পানিসঙ্কটে ভোগা অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিতও হয়েছে বিশ্বের বেশ কিছু স্থান। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ইতোমধ্যেই ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণে ব্যাপক ঘাটতি দেখা গেছে। পানির স্তর নিচে নেমেছে।

ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোখার কয়েকটি পথেরও উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, এজন্য কৃষিকাজ বাড়াতে হবে আরো অনেক গুণ। কমাতে হবে পর্যটন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন।

বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বিশেষ সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শিল্পযুগের তুলনায় এখন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ফলে খরার আবহ প্রায় প্রস্তুতই।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সুইডিশ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্টকহোম রেজিলিয়েন্স সেন্টারের জলবায়ু গবেষক উইল স্টেফেন বলেন, ‘মানুষ যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে, সেটাই পৃথিবীর তাপমাত্রার মূল নিয়ামক নয়। আমাদের গবেষণা বলছে, মানবসৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়লে তা পৃথিবীর অন্যান্য ব্যবস্থায়ও প্রভাব ফেলবে, যাকে ‘ফিডব্যাক’ বলা হয়। এটা আরও উষ্ণতা তৈরি করতে পারে, এমনকি আমরা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করলেও তা হতে পারে।’

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্টি হওয়ার সমস্যা গুলির মধ্যে প্রধান সমস্যাটি হলো বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের গড় উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চল গুলির ধীরে ধীরে উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠছে। এবং মেরু অঞ্চল বা শীত প্রধান অঞ্চলগুলিতে স্বাভাবিক উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেখানে বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বড় বড় হিমবাহ গুলি ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চল গুলিতে বন্যা, ভূমিক্ষয়, জলোচ্ছ্বাস জাতীয় দুর্যোগ গুলিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় আগে যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের বণ্টনে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসলের চাষ হতো সেখানে ভবিষ্যতে হয়তো অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির সময়সীমা হেরফেরের জন্য ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে। এবং কৃষিকাজে আরও নানান সমস্যা দেখা দেবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.