৫৩ টন চিনি চুরি হয় প্রকাশ্যেই

কুষ্টিয়া চিনিকল

কুষ্টিয়া চিনিকলের গুদাম থেকে প্রায় ৫৩ টন চিনি দিনের পর দিন অভিনব কৌশলে প্রায় প্রকাশ্যে চুরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির তদন্তে এমনটি উঠে এসেছে বলে একটি সূত্র গতকাল নিশ্চিত করেছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সূত্র আরও জানায়, কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- এ চুরির ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকেই।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায়কে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্ত পরিচালনা করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল আলম, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিকল্পনা প্রধান আইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক ইলিয়াস শিকদার ও ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান শিবনাথ রায় সাংবাদিকদের বলেন, নথিপত্র ও গুদাম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের সারবস্তু মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

কুষ্টিয়া চিনিকলে নিজস্ব স্টক স্টেটমেন্টে ১২১ টন চিনি থাকার কথা থাকলেও সেখান থেকে ৫৩ টন উধাও হয়ে যায়। এই চিনির বাজারমূল্য প্রায় ৩৩ লাখ টাকা। বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ৩ জুন, যখন চিনিকলের গুদামের বর্তমান অবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। স্টোরকিপার ফরিদুল ইসলামের তৈরি করা প্রতিবেদনে মজুদ, বিক্রি, আয় সংক্রান্ত তথ্যে অসামঞ্জস্যের বিষয়টি ধরা পড়ে।

চিনির বর্তমান মজুদ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম পরিদর্শন করেন এবং ৫৩ টন চিনির হিসাবে স্পষ্ট গোলমাল পাওয়া যায়। হিসাব মিলিয়ে দেওয়ার জন্য স্টোরকিপার গত শনিবার পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। শনিবারেও তিনি চিনির হিসাব বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হন। যে কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কারখানার জিএম (অর্থ) কল্যাণ কুমার দেবনাথকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই দিন সন্ধ্যায় চিনিকলের গুদাম থেকে চিনি চুরির বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয় পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা কুষ্টিয়ায় সোমবার থেকে তদন্তে নামেন।

সূত্র জানিয়েছে, তারা চিনিকলের চিনিসহ উৎপাদিত অন্য পণ্যের বর্তমান মজুদ, বিক্রয়, আয় সংক্রান্ত নথিগুলো খতিয়ে দেখেছেন। গুদাম ও বিভিন্ন ভা-ারের (স্টোর) দায়িত্বে থাকা বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অতি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।

যেভাবে চুরি সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে

গুদাম থেকে ৫৩ টন চিনি চুরি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি শক্তিশালী অসাধু চক্র এই কাজে জড়িত। তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চিনিকলে প্রতিদিনই চিনি বিক্রি হয়। ক্রেতারা মিলের বিক্রয় কেন্দ্রে মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে সিøপ গ্রহণ করেন। সেই সিøপ অনুযায়ী গুদাম থেকে চিনি বের করা হয়। মিলগেট থেকে ক্রেতারা চিনি বুঝে নেন। সিøপে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি চিনি গুদামের বাইরে এসেছে। এক বা একাধিক অসাধু চক্র সেই চিনি কিনেছে, যা কোনো নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গুদামে ভুয়া বিক্রয় সিøপও পাঠানো হতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা সব বিষয় যাচাই-বাছাই করছি। একটি বড় ও শক্তিশালী চক্র এ ঘটনায় জড়িত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.