
করোনা মহামারিকে সামনে রেখে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ বছর স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা গতবারের তুলনায় ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বেশি। গতবার সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাজেটে করোনা ভ্যাকসিন, চিকিৎসা সেবা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বাজেট জিডিপির মাত্র ০.৯ শতাংশ। আমরা কাজ করছি জিডিপির ৯/১০ শতাংশে নিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
বলা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত আর্থিক প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে মূলত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম আর নড়বড়ে স্বাস্থ্য খাতের প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায়। সরকারি হাসপাতালগুলোর প্রায় প্রতিটিতে চিকিৎসক-নার্সসহ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। ফলে জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করাতে গেলেও যন্ত্রপাতি না থাকার দোহাই দিয়ে রোগীর পকেট কাটছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। এমনকি জ্বর-সর্দি আর গুটিকয়েক ওষুধ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে মেলে না তেমন কোনো ওষুধ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালেও টাকা ছাড়া মেলে না সিট, ওষুধ, অপারেশনসহ চিকিৎসার সিরিয়াল।
এমতাবস্থায় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লে এর সুফল সাধারণ মানুষ পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বরাদ্দ বাড়ানো হলেও খরচের দক্ষতা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। যা কিছু খরচ হয়, সেখানে দুর্নীতি আছেই। সবমিলিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন করে বরাদ্দ হলে সাধারণ জনগণ কী পরিমাণ সুফল পাবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এ খাতে বরাদ্দের সঙ্গে সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় গতকাল পর্যন্ত দেশে ১২ হাজার ৭২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৫ হাজার ৯৮০ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা মনে করি বরাদ্দের অর্থ যেখানে অব্যয়িত থাকে, সেখানে সাত শতাংশ বরাদ্দ আপাতত কম নয়। এখন এই টাকাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খরচ করাও একটা বড় বিষয়। জনগণের পকেট থেকে যেসব উদ্দেশ্যে এই টাকাগুলো বেরিয়ে আসে, সেই চিন্তাটা মাথায় রেখেই খরচ করতে হবে। জনগণ যেন হাসপাতালে গিয়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সেবা, আন্তরিক সহযোগিতা ও ওষুধ পায়। কিন্তু কোনো সরকারি হাসপাতালেই এর কোনোটা যথাযথভাবে মেলে না।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, শুধু বাজেট বাড়ালেই হবে না, এটার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও জরুরি। আমরা দেখি যে আমাদের বাজেটের অধিকাংশ অর্থই কেনাকাটাতে ব্যয় হয়।
বাজেট পেশকালে মন্ত্রী আরও বলেন, আমি বিগত বাজেটের মতো এবারও অঙ্গীকার করছি এ মহামারি মোকাবিলায় যা করণীয় তার সবকিছুই সরকার করে যাবে। সে কারণে আগামী অর্থবছরেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
সরকারি সংস্থা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খরচ করতে পেরেছে মোট বরাদ্দের মাত্র ২৬ শতাংশ। তারপরও এবারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গত অর্থবছরের সংশোধিত ১৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকার বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা (১৬ শতাংশ বেড়েছে)। শুধু তাই নয়, এ সময়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য নেওয়া ৫৩টি প্রকল্পে ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিলে কোভিড মোকাবিলায় দুই প্রকল্পের ১৩ মাস পার হলেও এডিবি থেকে নেওয়া ঋণের খরচ হয়েছে মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আর বিশ্ব ব্যাংকের টাকার তিন ভাগের এক ভাগ।
Leave a Reply