
হঠাৎ করেই দেশে বেড়ে গেছে নৃশংস, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। আপনজনরাও ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য এইসব ঘটনা। মা খুন করছে সন্তানকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে, ভাই খুন করছে ভাইকে। খুনের পর লাশ রাখা হচ্ছে শয়নকক্ষে, রাস্তায়, বালুর ভেতর, বস্তার ভেতর, কাদার ভেতর, পানির ট্যাঙ্কে, ড্রেনে কিংবা ডাস্টবিনে। প্রায়ই এ ধরনের খুনের ঘটনা ঘটছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই অধিকাংশ খুনের ঘটনার কারণ। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সারাদেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৭ হাজার। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৪শ’ জন খুনের শিকার হচ্ছে। হঠাৎ করেই হত্যাকা-ের ঘটনায় বীভৎস, রোমহর্ষক ও নৃশংসতার ঘটনা কেন ঘটছে সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, নৃশংস, নিষ্ঠুর, বীভৎস খুনের নেপথ্যের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও মাদকের অর্থ জোগাড়। ইন্টারনেটের অপব্যবহার. অসহিষ্ণুতা, অতিমাত্রার ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেও মানুষের মাঝে দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতা। তুচ্ছ কারণে অসহিষ্ণু হয়ে খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে বীভৎস বিকৃত খুনের ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে অপেশাদার খুনীদের মাধ্যমে।
স্বামীর লাশ ৬ টুকরা ॥ সাম্প্রতিক খুনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার পর ৬ টুকরো করেন প্রথম স্ত্রী। এই ঘটনা ঘটেছে খোদ রাজধানীর মহাখালীতে। খুন হওয়া স্বামীর নাম ময়না। স্বামী খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে স্ত্রী ফাতেমাকে। গত রবিবার রাতে মহাখালীর আমতলী থেকে হাত-পা ও মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর কয়েক ঘণ্টা পরে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাটা হাত-পা এবং সোমবার দুপুরে বনানীর লেক থেকে বিছিন্ন মাথা উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জানা যায় তার নাম ময়না মিয়া। তিনি অটোরিক্সা চালক। বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ফাতেমা ছাড়াও তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। তিনি কিশোরগঞ্জে থাকেন। সোমবার ফাতেমাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি। বনানীতে তার দেখানো জায়গায় গিয়ে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী ফাতেমা তার স্বামী ময়নাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে ৬ টুকরা করে হত্যার পর একেক টুকরা একেক জায়গায় ফেলে দেয়। খুনের এই নৃশংসতায় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে স্ত্রী ফাতেমাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
ডাক্তার সাবিরা হত্যা ॥ আরও একটি সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা রাজধানীর কলাবাগানে ঘটেছে। এক নারী চিকিৎসককে হত্যা করে তোশকে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা। এই হত্যার বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক সাবিরাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর বিছানার তোশকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়াতে পারেনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক শেখ রাসেল কবির গণমাধ্যমকে বলেছেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে রক্ত ও পোড়ার ক্ষত আছে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি হত্যাকা-। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতের যেকোন সময় হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়েছে। শামসুদ্দীন আজাদ সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী। তার আগের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি চিকিৎসক ছিলেন। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে আগের স্বামীর ঘরের। ডাঃ সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি ফ্ল্যাটের দু’টি রুম অন্য একজনকে সাবলেট দিয়েছেন। ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেছেন, চিকিৎসক সাবিরা নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
পরকীয়ায় ইমামের খুন ॥ খোদ রাজধানীর দক্ষিণখানেই ঘটেছে আরেক নৃশংস খুনের ঘটনা। দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম তার নিজ কক্ষেই পোশাক শ্রমিক আজাহারকে (৩০) হত্যার পর ছয় খ- করেন মরদেহ। বাগ্বিত-ার জেরে ক্ষিপ্ত হয়ে কোরবানির পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে আজাহারের গলার ডানপাশে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এতেও ক্ষ্যান্ত হননি ইমান। লাশ গুম করতে ওই রাতেই ছুরি দিয়ে আজাহারের নিথর দেহ ছয় খ- করেন ইমাম মোঃ আব্দুর রহমান (৫৪)। নিহত আজহারের স্ত্রী আসমা বেগমের (২৪) ও সঙ্গে পরকীয়া ছিল ইমাম আবদুর রহমানের। রাতের অন্ধকারে কেউ টের পাওয়ার আগেই আজাহারের শরীরের খ-িত ছয়টি অংশ ব্যাগে ভরে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়া হয়। এরপর ওই কক্ষে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে। কক্ষের মেঝের রক্তমাখা কার্পেটটি তুলে নিয়ে ধুয়ে মসজিদের ছাদে ফেলে রাখেন এই ঘাতক। ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৯ মে দিনগত রাতে। ওইদিন থেকেই মঙ্গলবার (২৫ মে) ভোর পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিলেন ভুক্তভোগী আজাহার। ঘটনার পর থেকে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ওই শয়ন কক্ষে অবস্থান না করে ঘাতক আব্দুর রহমান পাশে থাকা মাদ্রাসাতুর রহমান আল আরাবিয়া নামে একটি মাদ্রাসায় দিন-রাত্রি যাপন করে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মসজিদের ইমাম ঘাতক আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সরদার বাড়ি জামে মসজিদের নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙ্গে উদ্ধার করা হয় দক্ষিণখানের বাসিন্দা আজাহারের মরদেহের খ-িত ছয়টি টুকরো। ঘাতক আব্দুর রহমানের কাছ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত তিনটি ছুরি ও একটি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়। শুধুমাত্র পরকীয়ায় নৃশংস ও রোমহর্ষক এই খুনের ঘটনায় ঘাতক ইমাম আবদুর রহমান ও তার পরকীয়া আসমা দুই জনেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে পুলিশের কাছে ও আদালতে। নিহত আজহারুল টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার রাজাবাড়ি গ্রামের জুলহাস উদ্দিনের ছেলে। তার মা সালেহা বেগম। পরিবারের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আজহারুল ছিল আদরের সন্তান।
দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া বলেছেন, গার্মেন্টস কর্মী আজহারুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর মরদেহ গুম করতেই ছয় টুকরা করে সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতার দুই আসামি। নিহতের স্ত্রী আসমা আক্তার ও মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। যার কারণেই তারা আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলেছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে।
পরকীয়ার প্রতিশোধে ছয় টুকরা লাশ ॥ রাজধানীর অদূরে গাজীপুরে ঘটেছে আরেক নৃশংস খুনের ঘটনা। স্ত্রী ও তার প্রেমিকের হাতে ৪০ দিন আগে খুন হয়েছেন স্বামী। খুন করার পর ৬ টুকরা লাশের মধ্যে প্রথমে পাওয়া যায় ৫ টুকরা। এরপর পাওয়া যায় আরেক টুকরা। গাজীপুরে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে এক ব্যক্তির দেহের অংশবিশেষ উদ্ধারের ৩৮ দিন পর হাত-পা, মাথাসহ আরও পাঁচ টুকরা উদ্ধার করে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। নিহত যুবকের নাম সুমন মোল্লা (২৮)। তিনি বাগেরহাটের চিতলমারী থানার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে। তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় নিহত সুমনের স্ত্রী আরিফা বেগম (২৪) ও আরিফার প্রেমিক তনয় সরকারকে (৩১) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমের জেরে এ হত্যাকা- সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে।
গাজীপুর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মাথা ও হাত-পা বিহীন অজ্ঞাত এক যুবকের দেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য দেহের টুকরো গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে কাশিমপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্তে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে সন্দিগ্ধ ব্যক্তি হিসেবে শনিবার ভোরে তনয় এবং আরিফাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং নিহত ব্যক্তির নাম সুমন মোল্লা বলে জানায়। পরে তাদের দেখানো মতে সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার ময়লার স্তূপ থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং চক্রবর্তীর তেঁতুইবাড়ী এলাকার ময়লার ভাগাড় থেকে নিহতের খ-িত হাত, পা, মাথাসহ দেহের পাঁচ টুকরা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া তনয়ের বাসা থেকে নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর ওয়ারীতে যুবকের পাঁচ টুকরা লাশ ॥ প্রথমে মায়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। এরপর মেয়েকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা। এ নিয়ে ছিল সন্দেহ, মনোমালিন্য আর পারিবারিক দ্বন্দ্ব। সর্বশেষ এই বিরোধের জের ধরেই খুন হয়েছেন সজীব হাসান (৩৪) নামের এক যুবক। হত্যার পর লাশ কেটে করা হয় পাঁচ টুকরা। সজীবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকু-ুতে। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহানাজ পারভীন (৪৭) নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় উদ্ধার হয়েছে হত্যায় ব্যবহার করা রক্তমাখা ছুরি ও বঁটি। ঢাকার ওয়ারীর কেএম দাস রোডের একটি বাসায় এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুই বছর ধরে ওই নারীর সঙ্গে সজীবের সম্পর্ক। সজীব থাকতেন স্বামীবাগের কাছাকাছি কেএম দাস লেনের ১৭/১ নম্বর বাসায়। সেখানে গিয়ে সজীবের সঙ্গে কারচুপি ( ড্রেসে পুঁতি বসানো) বসানোর কাজ করতেন ওই নারী। ওই সময় সজীবের সঙ্গে তার ভাললাগার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সজীবের বাসায় সময় কাটাতেন ওই নারী। রাতের বেলায় বাসায় ফিরলে পরিবারের লোকজন জিজ্ঞেস করলে তাদের বলতেন, তিনি পুঁতি বসানোর কাজ শিখছেন। কাজের প্রয়োজনে বাইরে ছিলেন। এরপর কাপড়চোপড় ব্যাগে ভরে ওই নারী কাউকে না জানিয়ে সজীবের বাসায় ওঠেন। এর মধ্যে ওই নারীর স্বামী স্ত্রীকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে থানায় জিডি করেন। গতকাল দুপুরের দিকে ওই নারী তার স্বামীকে ফোন করে বলেন, আমি কেএম দাস রোডের এই বাসায় আছি। এখানে মহাবিপদে আছি। তুমি এসে আমাকে নিয়ে যাও। পরে ওই নারীর স্বামী পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন, পাঁচ টুকরা লাশের সামনে ওই নারী বসে আছেন।
গ্রেফতার হওয়ার পর শাহানাজ পারভীন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ড্রেসে পুঁতি বসানো এবং বাসায় এসে কিছু ড্রেস দিয়ে যাওয়ার সুবাদে সজীব তার বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এই সুযোগে সজীবের সঙ্গে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে এর আগে সজীবকে বেশ কয়েকবার সতর্কও করেছেন তিনি। এর পরও সজীব থেমে থাকেননি। বরং তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় বারবার বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। ওই নারীর দাবি, তার তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে। আর দুই ছেলে চাকরি করেন। স্বামী ব্যবসা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ জানায়, সকালে ওই নারী ছুরি দিয়ে সজীবের বুকে আঘাত করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে পরে দুই পা ও অন্যান্য অঙ্গ কেটে ফেলেন। এরপর স্বামীকে ফোন করেন ওই নারী। পরে স্বামীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসা থেকে সজীবের পাঁচ টুকরা লাশ উদ্ধার করে। ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোমহর্ষক নৃশংসতা ॥ রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের বেউতা এলাকায় মালয়েশিয়া প্রবাসী আল-আমিনের বাড়িতে সাভারের ভাকুর্তা এলাকার কবিরাজ মফিজুর রহমানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে ৮ থেকে ১০ টুকরা করে প্রতিবেশীর মাগুর মাছের খামারসহ বিভিন্নস্থানে ফেলে রাখা হয়। প্রথমে হাত-পা, মাথাবিহীন শরীর ও পরে মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ মাকসুদা আক্তার লাকি, নজরুল ইসলাম নজু ও সালাউদ্দিন নামে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, কবিরাজির নামে শারীরিক সম্পর্ক ও প্রতারণার প্রতিশোধ নিতেই মফিজুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস রোমহর্ষক খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নৃশংস খুনের ঘটনা বাড়ার পেছনে প্রতিশোধ ও জিঘাংসাসহ বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, ইন্টারনেটের অপব্যবহার অন্যতম হতে পারে। তিনি বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হলে একটা মানুষ খারাপ কাজ করতে একটু ভাবে। তারা খারাপ কাজ পরিহার করে মানবিক আচরণগুলো করে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে মানুষের মনে নিষ্ঠুরতার মাত্রা বাড়তে পারে। তিনি বলেন, যেসব খুনের ঘটনা ঘটছে পুলিশ তা তদন্ত করে অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।
অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যার মনে ক্ষোভ যত বেশি, তার দ্বারা হত্যাকা-ে নৃশংসতা তত বেশি হয়। বীভৎস হত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়া সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে বীভৎসতা বাড়ছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনী কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ জোরালো করতে হবে। প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে মানসিক ও আর্থিক স্বার্থ রয়েছে। মানুষের চাহিদা, আকাক্সক্ষা বেড়ে গেছে। তাছাড়া আইন থাকলেও এর সঠিক প্রয়োগ করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে এই ধরনের খুনের ঘটনা কমানো যেতে পারে বলে মনে করেন অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞগণ।
Leave a Reply