গাজীপুর সিটির ২৭ নং ওয়ার্ডে সরকারি জমিতে পপি সুপার মার্কেট ও রিক্সা গ্যারেজ

দখলকৃত জমিতে পপি সুপার মার্কেট ও ইসমিতা জাহান পপি।

গাজীপুর সদর উপজেলার চান্দনা মৌজায় সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে সুপার মার্কেট ওঁ রিকসা গ্যারেজ নির্মাণ করে বছরের পর বছর ভোগ দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (২৭ নং ওয়ার্ড), সদর উপজেলার চান্দনা মৌজায় ১০ শতাংশ সরকারি খাস জমি দখল করে পপি সুপার মার্কেট নির্মান ওঁ সুপার মার্কেট সংলগ্ন রিকসা গ্যারেজ নির্মান করে তা ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে ভোগ দখলের অভিযোগ উঠেছে ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনারের স্ত্রী ইসমিতা জাহান পপির বিরুদ্ধে। আর দখলকৃত জমিতে রিকসা গ্যারেজ ও সুপার মার্কেট থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকাও ভাড়া আদায় করছেন তিনি।

গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চান্দনা মৌজার (১ নং খতিয়ানভুক্ত দাগ নং এস,এ ১৯৫৬, আরএস ৪১২৭/৪১৯১) আরএস নং দাগে মোট ১০ শতাংশ সরকারি খাস জমি রয়েছে। যার সামান্য অংশ সরকারি রাস্তা প্রশস্ত করার সময় ব্যবহৃত হয়েছে এবং বাকি অধিকাংশ খাস জমি অবৈধভাবে বেদখলে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই খাস জমির সামান্য অংশ রাস্তার সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি অংশে ২৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতি কমিশনারের স্ত্রী ইসমিতা জাহান পপির নামে পপি সুপার মার্কেট স্থাপন করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। আর একটি অংশ রিক্সা গ্যারেজ নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে সেটাও ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে। তবে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সুত্র সরকারি খাস জমির তালিকা ঘেটে এটাকে খাস জমি উল্লেখ করলেও ইসমিতা জাহান পপির দাবি এটা খাস জমি নয় এটা তার ক্রয় করা সম্পত্তি।

জানা গেছে, একই মৌজায় গিয়াস উদ্দিন নামের ব্যক্তির জমি রয়েছে। তিনি তার জমির সীমানা নির্ধারণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক কার্যলয় জমির সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে একই মৌজায় ঐ দশ শতাংশ খাস জমি চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়। তবে খাস জমি পেলেও সেই জমির সরকারি দখলে নেওয়ার বিষয়ে কেন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না তা জানা যায়নি।

null

তবে ইসমিতা জাহান পপি দাবি করেন, রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জৈনিক জাহিদ নামের ব্যক্তি ওঁ তার ভাই কানাডা প্রবাসীর কাছ থেকে এই ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছিলেন তিনি। তবে দুই ভাইয়ের মালিকানা থাকায় এবং এক ভাই কানাডা প্রবাসী হওয়ায় জিমি নিবন্ধন করতে পারেননি। জমির পাওয়ার দলিলের মাধ্যমে ভোগ করছেন তিনি। এটা কোন সরকারি খাস জমি নয়,দাবি করেন পপি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই জমির আরএস দলিলে (আরএস হচ্ছে পাকিস্থান প্রিয়ডের সময়কার দলিল) ছিল রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা জৈনিক জাহিদ নামের ব্যক্তির দাদার নামে। তবে এই জমির খাজনাসহ সরকারি ফি না দেয়ায় পরপর্বীতে এটা সরকারি খাস জমি হিসেবে সরকারি গ্যাজেট ভুক্ত হয়। সেই থেকেই এই জমিটা সরকারি খাস জমি হিসেবে থাকলেও বর্তমানে এই জমি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগ দখল করে রেখেছে পপি-মতি দম্পতি। আর গাজীপুর সিটির এরকম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দশ শতাংশ জমি বেদখলে থাকায় সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যে জায়গা টা গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সরকারি খাস জমি বলে উল্লেখ করেছেন সেটা সরকারি খাস জমিই। সরকারি খাস জমির ১০ শতাংশ এর সাথে লাগোয়া সড়কের বিপরীত পাশে পপির পাঁচ শতাংশ জমি থাকলেও বাস্তবে এই জমির সংলগ্ন কোন জমি পপি মতি দম্পতির নেই।

সদর উপজেলা ভূমি অফিস কার্যালয় সুত্র জানায়, যে জমি পপি-মতি দম্পতি অবৈধ ভাবে দখল করে আছে সেটা গেজেটভুক্ত সরকারি খাস জমি। এই জমির মালিক সরকার কোন ব্যক্তি নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ভূমি রেজিস্ট্রেশন শুরু হলে তখন থেকেই এই জমির খাজনা দেয়ার কোন মানুষ না থাকায় সরকারি সম্পত্তি হিসেবে এটা গ্যাজেটভুক্ত হয়। মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ এই জমির তফসিলেও সরকারি সম্পত্তি হিসেবেই মালিকানা দাখিল করা হয়েছে। এই জমি যদি কেউ নিজের বলে দাবি করে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কারণ এটা এখন গ্যাজেটভুক্ত সরকারি সম্পত্তি। আর সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানা দাবি করার কোন সুযোগ নেই।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া তাবাসসুম জানান, আমি একটা অভিযানে আছি। আপনি আমাদের কে তথ্য পাঠান সরকারি খাস জমি যদি কেউ অবৈধভাবে দখল করে তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্ত গ্রহণ করব।

ইসমিতা জাহান পপির বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখল ও দখলের পাঁয়তারার অভিযোগঃ

ইসমিতা জাহান পপি ও তার স্বামী মতি কমিশনারের বসতভিটা দখল ও উচ্ছেদ থেকে বাঁচতে ফত ২৯ এপ্রিল গাজীপুর প্রেসক্লাব সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তোভোগী এক বিধবা নারী।

ফাতেমা বেগম নামের ঐ বিধবাঁ নারী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি একজন বিধবা অসহায় নারী। গাজীপুর সিটির লক্ষীপুরা এলাকায় সারে দশ শতাংশ জমির উপর বাড়ি নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশনের যাবতীয় খাজনা খারিজ টেক্স পরিশোধ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। উক্ত জমিসহ বসতভিটা জবর দখল করার উদ্দেশে স্থানীয় প্রভাবশালী ইসমিতা জাহান পপি ও তার স্বামী সাবেক কমিশনার আব্দুল মতিন ওরফে মতি কমিশনার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে। তারা বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে ঝগড়া বিবাদ এবং আমার জায়গাসহ বাড়িটি অন্যায় ভাবে দখলের পায়তারা করছে। এছাড়া আমার একমাত্র পুত্র সন্তান মোঃ সিফাত আহমেদ(১৭) কে হত্যাকরে লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি আদালত, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে বিবেকবানদের কাছে ঘুরছি। জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আমার নামে নানা মিথ্যাচার রটানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মোবাইল ফোনে আমাকে ও আমার সন্তানকে খুন, গুম করার হুমকি অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নিকট গত ২১ এপ্রিল অভিযোগ দায়ের করি।

তিনি আরও বলেন, মতি-পপি দম্পতির অত্যাচার নির্যাতনের ভয়ে স্থানীয়রা কোন প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনের কাছে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।এছাড়া মতি কমিশনারের বড় ভাই ইমাম উদ্দিন ও ডাঃ সিরাজসহ এলাকাবাসী মতি-পপি দম্পতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি তারা ভুয়া দলীল করে নিজেদের দাবি করে আমাকে প্রায়শই উচ্ছেদের চেষ্টা করে। কখনও পুলিশকে ফোন করে কখনও জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ এ ফোন করে প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানে টিকে আছি। আদালতে এবিষয়ে মামলা চলমান থাকলেও পপি আমাকে প্রতিমুহুর্তে জমি দখলের হুমকি দিয়ে আসছে। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার দশ শতাংশ জমি বিক্রির করে এখান থেকে চলে যাবার হুমকি দিয়ে আসছে।

এদিকে মতি কমিশনার আপন খালাতো ভাই গাজীপুরের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ সিরাজের জমি দখল করে ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে ইসমিতা জাহান পপির বিরুদ্ধে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.