রোহিঙ্গা ও এতিমদের অর্থে মামুনুলের সম্পদের পাহাড়

মামুনুল হক

নিদারুণ অসহায় রোহিঙ্গা-হতদরিদ্র এতিম সন্তানদের জন্য সাহায্য-সহায়তায় আসা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিত্ত, বৈভব, বাড়ি, গাড়ি, ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মামুনুল হক। তলোয়ার নিয়ে জাতীয় সংসদে হামলা করার পরিকল্পনার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন মুফতি আমির হামজা। মুহতামিম মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর রাজধানীতে মূল্যবান জমিতে অবস্থিত মাদ্রাসা দখল, জুনায়েদ বাবুনগরীর ও তার খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকী হেলিকপ্টারে করে বিয়ে ও বিয়ের মেহমানদের আনা-নেয়ার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে উঠে এসেছে তাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, অর্থলিপ্সা চরিতার্থ, রোহিঙ্গা, এতিম, মাদ্রাসার নামে আসা অর্থ তছরুপ ও লোপট করে দেয়ার বহু ঘটনা। মামুনুল হক, আমির হামজা, মুফতি মনির হোসেন কাসেমী, ইনামুল হাসান ফারুকীসহ তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে তাদের ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে রাজকীয় হালে বিলাসবহুল জীবন যাপন করাসহ নানা কেলেঙ্কারীর ঘটনা উঠে এসেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে পাওয়া উঠে আসা তথ্যে এ খবর জানা গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাদ্রাসাগুলো পরিচালনার খরচের যোগান আসে সরকারী- বেসরকারী অনুদান থেকে। যার একটি বড় অংশই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের দান-সহায়তার। তবে সেসব অর্থের খরচে কোন ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি হেফাজত নেতারা। মাদ্রাসার অর্থায়নগুলো বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে হয়। তারা মাদ্রাসা কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজে হেফাজতের কাছে দান করেন। আর সেসব দানের অর্থ নিজেদের বাড়ি-গাড়ি কেনার কাজে ব্যয় করেছেন। হেফাজত নেতাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাটের পাশাপাশি চলাফেরা করেন দামী গাড়িতে। কিন্তু সেসব বাড়ি-গাড়ি কিনতে অর্থের উৎসের বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট তথ্য নেই তাদের কাছে। রোহিঙ্গা ও এতিমদের সহায়তায় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সূত্র থেকে আসা কোটি কোটি টাকা নিজেদের বাড়ি,গাড়ি কেনা ছাড়াও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণে ব্যবহার করছেন মামুনুল হকসহ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মকা- বা হেফাজতের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ওই টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, দেশের বেশিরভাগ মাদ্রাসা অর্থাৎ কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রনণ করত হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব নেয়ার সুযোগ পাওয়ার সুবাদে মাদ্রাসাগুলোর নামে আসা যে কোন সহায়তার অর্থ নিজেদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করতেন হেফাজত নেতারা। এমনকি মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের নামে আসা সহায়তার নামে আসা অর্থও হেফাজত নেতারা হাতিয়ে নিয়েছে। দেশের মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্ধারিত আলাদা বোর্ড থাকলেও, তা শুধুই নামেই। প্রকৃতপক্ষ মাদ্রাসাগুলো পরিচালনা করত হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সিন্ডিকেট, যা তাদের ইচ্ছাতেই পরিচালিত হওয়ার সুযোগে সহায়তার নামে আসা অর্থ অনৈতিকভাবে নিজেদের মতো করে খরচ করতেন। অর্থসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগে অর্থ লোপাট করে নিজেদের নামে অর্থ, বিত্ত, বৈভব, বাড়ি, গাড়ি, ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন হেফাজত নেতারা, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মামুনুল হক।

পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্য মতে, মামুনুল হকসহ হাতে গোনা কয়েকজনের নেতৃত্বে হেফাজত নেতাদের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মাদ্রাসাগুলোর অর্থের নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকায় নির্ধারিত মাদ্রাসা বোর্ডকে নিষ্ক্রিয় করে তারা মাদ্রাসায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে পেরেছেন সহজেই। ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসার এতিম-অসহায়, কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করে একসময় রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠেন এই হেফাজত নেতারা। জাতির পিতা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশজুড়ে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালায় হেফাজতে ইসলাম। সরকারী বাড়ি, গাড়ি, অফিস, আদালত এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তাদের যানবাহন পুড়িয়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে। এরপরেই হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ধারাবাহিক অভিযানে একে একে গ্রেফতার করা হয় দলটির নেতৃস্থানীয়দের। গ্রেফতারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ এবং দায়ের করা মামলাগুলোর ধারাবাহিক তদন্তে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। উঠে এসেছে সাহায্যের নামে আসা অর্থ মেরে দিয়ে পকেট ভরে তা দিয়ে ধনসম্পদের পাহাড় গড়ের তোলার তথ্যাদি।

রোহিঙ্গা সহায়তার অর্থের হিসাব নেই ॥ মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্কটের সময় তাদের সহায়তার জন্য অর্থ সহায়তার আহ্বান করে হেফাজতে ইসলাম। সে সময় বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে। বিদেশ থেকে আসা টাকার হিসাব নেই গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের কাছে। কী পরিমাণ টাকা এসেছে তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করতে পারছে না হেফাজত নেতারা। তবে বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছে। শুধু মামুনুল হকের এ্যাকাউন্টেই ছয় কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কত টাকা এসেছে এবং টাকাগুলো কীভাবে এসেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোরবানির পশুর চামড়ার অর্থের হদিস নেই ॥ কোরবানির ঈদ এলেই মাদ্রাসায় এতিমদের সহায়তার জন্য কোরবানির পশুর চামড়া দান করার আহ্বান জানানো হয়। জনসাধারণও মাদ্রাসাগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পশুর চামড়া কিংবা চামড়া বিক্রির অর্থ দান করে দেন। অথচ এই চামড়া বিক্রির অর্থের নয়ছয় করেছেন হেফাজত নেতারা। প্রতিবছর চামড়া সংগ্রহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়েরও কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি তারা।

কোণঠাসা বেফাক-হায়াতুল উলিয়া ॥ মাদ্রাসা পরিচালনা জন্য সরকার নির্দেশিত বোর্ড বেফাক বা হায়াতুল উলিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হেফাজত নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতার এই বোর্ডগুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বোর্ডগুলো জিম্মি করে ব্যবহার করা হচ্ছিল নিজেদের স্বার্থে। হেফাজতের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার সংগঠনগুলো ব্যবহার করা হয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পাশাপাশি হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। ফলে অনেক ভাল আলেম-ওলামারা সেখানে সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ধরনের অর্থ যাদের হাতে চলে যাচ্ছে কিংবা অর্থের নিয়ন্ত্রক যারা, তারাই রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। আবার ক্ষেত্রবিশেষ তারাই এই টাকাগুলোর মালিক হচ্ছেন। কারণ যার কাছে অর্থ আছে, টাকার বিনিময়ে তারাই ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চান।

আর্থিক অনিয়মে পৃথক মামলার উদ্যোগ ॥ ডিবি পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের ঘটনায় ১৪টি মামলা ডিবি তদন্ত করছে। পাশাপাশি কিছু নতুন মামলারও তদন্ত হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাগুলোর চার্জশীট দাখিল করা হবে। তদন্তে পাওয়া আর্থিক অনিময়ের ঘটনায় হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদ্রাসাগুলোতে সহায়তার নামে বিভিন্ন উৎস থেকে যে পরিমাণ সহায়তা আসে তা দিয়ে বেশ ভালভাবে মাদ্রাসাগুলো পরিচালনার কথা। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের খুবই নি¤œমানের মানবেতর জীবন-যাপনের তথ্য পাওয়া যায়। অথচ সেসব মাদ্রাসা পরিচালনার নামে দানের অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন হেফাজত নেতারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, হেফাজতের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর বেশ কিছু মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তে বিদেশ থেকে আসা মাদ্রাসার জন্য, এতিমখানা ও রোহিঙ্গা ফান্ডের বিপুল পরিমাণ টাকা গায়েব করে দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। টাকাগুলো তাদের হিসাবে সঠিকভাবে রাখা হয় না, হিসাবে আমরা স্বচ্ছতা পাইনি।

তদন্তে বিপুল পরিমাণ টাকা তছরুপের তথ্য মিলেছে। যে টাকায় তারা শানশওকত, বাড়ি-গাড়িসহ আভিজাত্যের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। যারা এসব অর্থ ব্যবহার ও তছরুপ করছেন তারা নিজেরা যেমন টাকার মালিক হচ্ছেন তেমনি সিন্ডিকেট গড়ে অন্যদের কোণঠাসা করছেন। শুধু মামুনুল হকের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আরও বেশ কিছু এ্যাকাউন্ট আমরা পেয়েছি। গভীরভাবে মামলাগুলো তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আদালতে আমির হামজার স্বীকারোক্তি ॥ জাতীয় সংসদ ভবনে তলোয়ার নিয়ে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে শেরে বাংলা নগর থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় বিতর্কিত ইসলামী বক্তা বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসীর পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুফতি আমির হামজা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন আদালতে। সোমবার, ৩১ মে আদালতে আসামির জবানবন্দী গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূইয়া। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন জিআর শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান আদালতে পাঠানোর পর আসামি জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দী রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

গত ২৫ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালত আমির হামজার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর আগে সোমবার (২৪ মে) তাকে কুষ্টিয়া থেকে আটক করেন কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টারত সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান উসামা ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, সাকিবকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় আসামি মুফতি আমির হামজাকে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাকিব মোবাইল ফোনে উগ্রবাদ বার্তা সংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী জিহাদী হামলার বার্তা সংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হয়। ওই এজাহারে মুফতি আমির হামজার নাম ছিল। তার সূত্রে ধরেই তাকে আটক করা হয়। মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের রিয়াজ সর্দারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসীর পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মাদ্রাসা দখল, হেলিকপ্টারে করে বিয়ে ॥ হেফাজতে ইসলামের সাবেক অর্থ সম্পাদক ও রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মনির হোসেন কাসেমীর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, অর্থলিপ্সা এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকীর স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ তছরুপ, লোপাটের অনেক ঘটনা বের হয়ে এসেছে তদন্তে। দীর্ঘদিন ধরে তারা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। এতে একদিকে তারা যেমন অঢেল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়েছেন, অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করেছেন নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের ঢাল হিসেবে।

মুফতি মনির হোসেন কাসেমীকে গত ২১ মে বারিধারা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের সহিংসতার ঘটনাতেও তিনি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ইনামুল হাসান ফারুকী সম্প্রতি ঘটা করে তার বিয়ের উৎসব করেন। বিয়েতে দু’টি হেলিকপ্টার ভাড়া করেন তিনি। হেলিকপ্টারে অতিথি আনা- নেয়া করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে খরচ করেছেন লাখ লাখ টাকা। বিয়ে করেছেন কুয়েত প্রবাসী কনেকে। গত ২২ মে তাকে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। অপরদিকে গত ২১ মে রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন ইনামুল হাসান ফারুকী।

রাজধানী বারিধারার মাদ্রাসা দখল॥

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মনির হোসেন কাসেমী রাজধানী ঢাকার বারিধারা মাদ্রাসা দখল নিতে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা নাজমুল হাসানকে মাদ্রাসায় না আসার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন। অথচ মাওলানা নাজমুল হাসানকে নুর হোসেন কাসেমী জীবদ্দশায় ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হিসেবে অছিয়ত করে যান। সরকারবিরোধীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বারিধারা মাদ্রাসা দখলে নিয়ে ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলাম ও সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ছিল মনির হোসেন ও তার সহযোগীদের মূল লক্ষ্য। মনির হোসেন কাসেমী রাজধানী বারিধারা মাদ্রাসার গরিব, অসহায় ছাত্রদের ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য এবং গুলশান, বনানী, বারিধারার ধনাঢ্য ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদার টাকা সংগ্রহ করেন। অথচ এ টাকার সিকিভাগও মাদ্রাসা ছাত্রদের পেছনে ব্যয় করেননি তিনি। চাঁদার টাকায় ঢাকার অভিজাত পাড়ায় গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। ছাত্রদের নামে তোলা চাঁদার টাকায় আয়েশী জীবনযাপন করছেন তিনি। তিনি অতীতেও এ ধরনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরমধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুর মাদ্রাসায় চাকরিকালীন কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মনির হোসেন। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পরে তাদের সাহায্যার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থা অর্থ সাহায্য করে। মামুনুল হকের মতো মনির হোসেন কাসেমী ওই চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় না করে নিজেরা অর্থ আত্মসাত, তছরুপ, লোপাট ও গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ তদন্তাধীন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দাবি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.