
গ্রেপ্তার ৫৪ ছাত্রের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে দুটি জালিম সরকার আছে। একটি হলো নেতানিয়াহুর ইসরায়েল। অন্যটি নরেন্দ্র মোদির ভারত। তাই যখন নরেন্দ্র মোদি এসেছেন তখন ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ন্যায্য কাজ করেছেন। ওই সময়ে গ্রেপ্তার ৫৪ জনসহ সকল ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারাই উন্নত ভবিষ্যৎ দেখাতে পারে। নিজের স্বার্থেই আমি তাদের আন্দোলনে আসি। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিন।’ আজ সোমবার ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকদের ব্যানারে’ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫৪ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশ শেষে ডা. জাফরুল্লাহসহ উপস্থিত নেতারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের উদ্দেশে রওনা দেন। হাইকোর্টের মাজার গেটে আসলে পুলিশ প্রবেশে বাধা দেয়। এ সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির অফিসে যেতে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবস্থান নেন। সুপ্রিম কোর্টের গেটে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর বেলা সোয়া ২টার দিকে ডা. জাফরুল্লাহ নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রবেশ করেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিডিয়া উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু জানান, প্রতিনিধি দলটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাত শেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘গত ৪ মে বাংলাদেশের সংবিধান রচিয়তা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির বরাবর ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক ৫৪ জন ছাত্রের মুক্তির দাবিতে স্মারকলিপি দিলেও কোনো সমাধান হয়নি। কোর্ট তাদের মামলার কাগজপত্র দিতে গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করছে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলার চাইতে ছাত্রদের মামলার ধারা আরও সহজ ও জামিনযোগ্য। রোজিনা জামিন পেল সাত দিনের মধ্যে। ছাত্রদের জামিনের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এর আগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ইসরায়েল এবং ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে রেখেছে। ঘেরাও রাখার একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা আছে। একটি হলো বাংলাদেশকে সিকিমে পরিণত করা। অন্যটি আপনারা দেখতেই পেয়েছেন। পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না উনি কী ভুল করছেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘একটা জাতিকে ধ্বংস করতে তার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা প্রয়োজন। দয়া করে এটি করবেন না। দরকার হলে শিক্ষার্থীরা দুই বা তিন শিফটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন, না হলে জাতি সিকিমে পরিণত হবে। আর এর জন্য দায়ী হবেন আপনি।’
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটি (আওয়ামী লীগ সরকার) জালিম সরকার। মানবতার প্রতি তাদের কোনো কর্ণপাত নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। দেশে সব চলে কিন্তু তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে আজকের এই সমাবেশে অনেক শিক্ষার্থী থাকত। তাদের স্লোগানে সরকারের গদি কেঁপে যেত। তাই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, ‘সরকার পতনে বৃহত্তর আন্দোলন ছাড়া আমাদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারব না। চলেন সবাই একসঙ্গে রাজপথে নামি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘এই সরকার ৫৪ শিক্ষার্থীর যতদিন মুক্তি না দেবে, ততদিন আমরা রাজপথে থাকব।’
Leave a Reply