৮২ কোটি টাকার প্রকল্প ৯৮৬ কোটিতে

অর্থনৈতিক অঞ্চল

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে মোংলা, মিরসরাই ও সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে-বাইরে মৌলিক অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ২০১৪ সালে ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদ্যাবধি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এর আগে দুবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এখন নতুন করে এই প্রকল্পের সংশোধনের নামে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ৯৮৬ কোটি টাকা। এই হিসাবে দুই বছরের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে ৭ বছর আর ব্যয় বাড়ল ৯০৪ কোটি টাকা। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প-১ম পর্যায় (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ও পরিচালনায় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা। এর মাধ্যমে মোংলা, মিরসরাই ও সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য অন-সাইট এবং অফ-সাইট মৌলিক অবকাঠামো তৈরি করা, আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা। এর ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে বলা হয়েছিল।

২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬-এর জুন নাগাদ এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর দুবার প্রকল্পে সংশোধনী এনে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এবার মাত্র ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ৩য় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে চলতি বছরের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প অনুমোদন কালে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮১.৯৫ কোটি টাকা। এর ১ম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২২ কোটি টাকায়। ২য় সংশোধনীর পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯০৫ কোটি টাকায়। এবার ৩য় সংশোধনী পাস হলে ব্যয় দাঁড়াবে ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব সহবিল থেকে দেবে ১২ কোটি টাকা। আর বিশ^ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে মিলবে ৯৪৫ কোটি টাকা। বাকি ২৯ কোটি টাকা ডিএফআইডি থেকে অনুদান পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এর পেছনে ৭টি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে জালিয়ার দ্বীপ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, টেকনাফ, আনোয়ারা-২, আনোয়ারা, ঢাকা এসইজেড, কেরানীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার সদর, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, বন্দর ও সোনারগাঁ এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফলে মিরসরাই ও সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের উন্নয়নের জন্য অন্যান্য অঞ্চলের অব্যবহৃত তহবিল ব্যবহার করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (মিরসরাই-১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর-২ অর্থনৈতিক অঞ্চল) অঞ্চলের বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন এজেন্সি এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্র্তৃপক্ষের জন্য অফিস স্পেস সম্প্রসারণ করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে আগে প্রস্তাবিত একক লেনের রাস্তার পরিবর্তে দুই লেনসম্পন্ন রাস্তা নির্মাণ করা, এলাকা বৃদ্ধির কারণে জমি ভরাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূমি উন্নয়ন খাতে ব্যয় প্রাক্কলন বৃদ্ধি, ব্রিজ নির্মাণ, সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং ইছাখালী চ্যানেলের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে স্লুইগেট নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন খাত এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ব্যয় হ্রাস, পরিকল্পনা কমিশন থেকে ২য় সংশোধিত ডিপিপির ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে কতিপয় অঙ্গের ব্যয় ও পরিমাণের পরিবর্তনপূর্বক গৃহীত পূর্বানুমোদন বিবেচ্য সংশোধন প্রস্তাবে প্রতিফলন এবং অর্থনৈতিক কোডের পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি কারণে ৩য় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন; যেমন ভূমি উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া কনসালট্যান্সি ফার্ম নিয়োগ, বিজ্ঞাপন, প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজও হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তরা বলছেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ব্যাপক কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা বলছেন, বাস্তবতার নিরিখে ভৌত অবকাঠামোতে কতিপয় পরিবর্তন সাধন, প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কতিপয় খাতে ব্যয় প্রাক্কলন পরিবর্তন প্রয়োজন হওয়ায় প্রকল্পের ৩য় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ, যুগোপযোগীকরণ, গতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ যথাযথভাবে নির্ধারণের স্বার্থে আনীত সংশোধন প্রয়োজন বিধায় সংশোধনীটি অনুমোদনযোগ্য। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.