গাজীপুরে স্বামীকে ৬ টুকরো করে হত্যা

রাজধানীর দক্ষিণখানের পর এবার গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্বামীকে ছয় টুকরো করে হত্যা করেছে স্ত্রী ও তার প্রেমিক। নিহতের নাম সুমন মোল্লা (২৮)। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারি থানায়।

এ ঘটনায় গত শনিবার ভোরে সুমন মোল্লার স্ত্রী আরিফা বেগম (২৪) ও তার প্রেমিক তনয় সরকারকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।

গত ২১ এপ্রিল কাশিমপুর সারদাগঞ্জ হাজি মার্কেটের পুকুরপাড় এলাকায় জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সেপটিক ট্যাংক থেকে অজ্ঞাত হিসেবে সুমনের হাত-পা ও মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এরপর গত শনিবার সারদাগঞ্জের তেঁতুইবাড়ির মিল সংলগ্ন ময়লার ভাগাড় থেকে গলিত অবস্থায় লাশের বাকি পাঁচ টুকরো, একই এলাকার হাজি মার্কেটের পুকুরপাড়ের ময়লার স্তূপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং তনয়ের বাসা থেকে সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গতকাল রোববার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান উপকমিশনার (অপরাধ) মো. জাকির হাসান।

তিনি জানান, গত ২১ এপ্রিল কাশিমপুর সারদাগঞ্জে সেপটিক ট্যাংক থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির হাত-পা ও মাথাবিহীন লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ থানায় হত্যা মামলা করে। পরে সূত্রহীন মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল অন্য কোথাও হত্যার পর লাশটি এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। এক পর্যায়ে স্থানীয় বিভিন্ন সিসিটিভির এক সপ্তাহের ফুটেজ পর্যবেক্ষণে লাশটি সুমন মোল্লার বলে শনাক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নিহতের স্ত্রী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার নারায়ণপুরের আশরাফ আলীর মেয়ে আরিফা বেগম ও তার প্রেমিক ফরিদপুরের মধুখালী থানার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে তনয় সরকারকে শনিবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, লাশের বাকি পাঁচ টুকরো, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, দেড় বছর আগে সুমন আরিফাকে বিয়ে করে। তারা আগেও একাধিক বিয়ে করেছিল। সুমনকে বিয়ের আগে থেকেই তনয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল আরিফার। বিয়ের পরও সম্পর্ক রাখলে, বিষয়টি টের পেয়ে সুমন দুজনকে শাসন ও মারধর করে। এরপরই তনয় ও আরিফা হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে আরিফা স্বামীকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেটি খেয়ে সুমন ঘুমিয়ে পড়লে আরিফা তনয়কে বাসায় ডেকে আনে।

এরপর রাত ১২টার দিকে দুজন বালিশচাপা দিয়ে সুমনকে হত্যা করে। পরদিন করাত ও চাপাতি দিয়ে তারা লাশ ছয় টুকরো করে। এরপর হাত-পা ও মাথাবিহীন লাশ আরিফার ব্যবহৃত কাঁথা দিয়ে বেঁধে জামাল উদ্দিনের সেপটিক ট্যাংকে এবং বাকি পাঁচ টুকরো পলিথিনে মুড়িয়ে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়।

তনয় ও আরিফাকে আজ সোমবার গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান উপকমিশনার জাকির হাসান।

গত ১৯ মে পরকীয়ার জের ধরে রাজধানীর দক্ষিণখানে পোশাককর্মী আজহারকে (৩০) ছয় টুকরো করে হত্যার পর লাশ স্থানীয় সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয় মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান। স্ত্রী আসমা আক্তারের সঙ্গে ইমামের পরকীয়া জেনে যাওয়ায় দুজন মিলে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.