
শরিয়তপুরঃ জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম ধাপের ৮মে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ১৫২ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনও হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে। নির্বাচনে নেই আওয়ামী লীগের দলীয় কোন প্রতীক। এরই মধ্যে প্রার্থীর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই উপজেলা নির্বাচনে হিসাব নিকাশ অনেকাংশেই পরিবর্তন হয়েছে সম্প্রতি সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইউনুছ সরকারের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে। প্রার্থী দুই জন। আনারস প্রতীকে সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছেল কবির গুলফাম বকাউল এবং মোটরসাইকেল প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির মোল্যা। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই চলছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাররা এমন ব্যক্তিকে চান , যাঁকে একেবারে এলাকার রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, শিক্ষক সবাই চিনবে। যিনি সৎ, মানবিক ব্যক্তি, শিক্ষিত, মার্জিত এবং স্বজ্জন ব্যক্তি। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমনই একজন ব্যক্তি ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছেল কবির গুলফাম বকাউল। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ঐতিহ্যবাহী বকাউল পরিবারের কৃতি সন্তান,ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছেল কবির গুলফাম বকাউল। গুলফাম বকাউল তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, পরিবর্তনের আভাস নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তার সমর্থ বা সক্ষম দেখাতে অনেকটাই স্বক্ষম হয়েছে। ওয়াছেল কবির গুলফাম বকাউল ইতিমধ্যে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। মাঠ পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন।
প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকাতেই দলীয় ভোটারের বাইরে একটা বড় অংশের ভোটার থাকে। নির্বাচনে সেই ভোট শেষ পর্যন্ত জয়ের দ্বার প্রান্তে এনে দেয় প্রার্থীকে। আর এই উপজেলার দলীয় ভোটার তো আছে দলের বাইরের ভোটারদের সিংহ ভাগই ওয়াছেল কবির গুলফাম বকাউলকে সমর্থন দিচ্ছেন, আশ্বাস দিচ্ছেন ভোট দেওয়ার। তারা পরিবর্তন চাইছেন। প্রার্থী পরিবর্তনেই উন্নয়নের পরিবর্তনে আশা রাখছেন এখানকার ভোটাররা।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে কোন প্রার্থী না থাকলেও বর্তমান চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির মোল্যা নিজেকে দলীয় প্রার্থী এবং স্থানীয় সাংসদের প্রার্থী বলে নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের জানাচ্ছেন। প্রতিক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো আচরণ বিধি লঙ্ঘন। ইতিমধ্যে হুমায়ুন কবির মোল্যা সেই আচরণ বিধি ভঙ্গ করে প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের বলছেন আমি দলীয় প্রার্থী, এমপির সমর্থিত প্রার্থী। যা নিয়ে ভোটার এবং দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে দলমত নির্বিশেষ সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চান ইঞ্চিয়ার গুলফাম। কারও বিরুদ্ধে বৈরিতা নয় একে অন্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে চান তিনি। উন্নয়নের ছোয়া না লাগা ভেদরগঞ্জ উপজেলাকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে বির্নিমাণ করতে চান।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ১৯ হাজার ৭৯৩ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ৮৬২ জন। কোন প্রকার পেশী শক্তি ব্যবহার না হলে। ভোটাররা নির্দ্বিধায় ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলে ৮০ শতাংশ ভোট পাবেন ইঞ্জিয়ার গুলফাম এমনটাই দাবি সাধারণ ভোটার এবং দলের একটা বড় অংশের কর্মী সমর্থকদের।
ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছেল কবির গুলফাম ছোট বেলা থেকেই প্রচন্ড মেধাবী একজন ছাত্র। তিনি কাচিকাটা প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাইমারী মেধা বৃত্তি ও চরকুমারিয়া হাইস্কুল থেকে জুনিয়র বৃত্তিতে ফরিদপুর জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এবং রাজশাহী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এস এস সি এবং এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপী ঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় BUET এ ভর্তি হোন। কলেজ জীবনেই ওয়াছেল কবির ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হোন। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিনিয়র সহ-সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। বুয়েট থেকে যন্ত্রকৌশল এ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে তিনি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এ চাকুরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংল্যান্ড থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ হুমায়ুন কবির এর ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার ওয়াছেল কবির গুলফাম ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে শরিয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানাধীন চরভাগা ইউনিয়নের বকাউল পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা নুরুল হক বকাউল (যিনি হক সাহেব নামেই সমধিক পরিচিত) ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন। মাতা বিলকিস বেগম ছিলেন গৃহিনী। সাত ভাই বোনের মধ্যে ওয়াছেল কবির গুলফাম ষষ্ঠ। বড় দুই ভাই যথাক্রমে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ হুমায়ুন কবির, যার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ হুমায়ুন কবির উচ্চ বিদ্যালয়। মেজো ভাই ডা: এ এফ এম ইকবাল কবির ফয়সাল, যিনি বিশ্বব্যাংক এবং ইউনিসেফ এর সাবেক আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বড় তিন বোন, যথাক্রমে উম্মুল আরা শেলী, স্বামী প্রফেসর ড: আলী আকবর (ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মেজো বোন প্রফেসর মোমরাজ বেগম (সাবেক বিভাগীয় প্রধান, সমাজকর্ম বিভাগ, টি এন্ড টি কলেজ, মতিঝিল) স্বামী: প্রফেসর ডা: নাজমুল আহসান, সাবেক পরিচালক, ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড রিসার্স, সেজো বোন হামদান বেগম, স্বামী কামাল উদ্দিন আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রতিষ্ঠাতা, হাজী শরিয়ত উল্ল্যাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সখিপুর। ছোট বোন রোমানা হক রোজি, স্বামী প্রফেসর ডা: মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেন্সেলর, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।
শিপিং কর্পোরেশন এর চাকুরী ছেড়ে তিনি দক্ষিন কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানিতে তৎপরবর্তীতে ইংল্যান্ডের দিলমুন শিপিং লাইন্স এ চাকুরিতে যোগদান করেন। ২০০০ সালে চাকুরী ছেড়ে তিনি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর কর্নধার এবং প্রধান নির্বাহী। ওয়াছেল কবির এর স্ত্রী হামিদা বানু ফ্লোরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখান বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। তাদের দু’কন্যা যথাক্রমে ইঞ্জিনিয়ার তাসফিয়া কবির এবং রোকসাদ কবির। তাশফিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃত্তি নিয়ে ন্যাদারল্যান্ডস এ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পি এইচ ডি করছে। জামাতা সৈয়দ মাহির তাজওয়ার একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। নেদারল্যান্ডস এ উচ্চ শিক্ষা শেষে সেখানকার একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে চাকুরী রত আছে। ছোট কন্যা রোকসাদ কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছর কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করে মাস্টার্স এ অধ্যয়ন করছে। ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেল কবির তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাজীবি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
বৃটিশ আমলে গুলফাম ভাইয়ের দাদা এই দুর্গম চরাঞ্চলে গড়ে তুলেছিলেন জুনিয়র মাদ্রাসা ও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। তাঁর বড় চাচা ছিলেন অবিভক্ত সখিপুর ইউনিয়ন কাউন্সিল এর দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট। যিনি খান সাহেব’ উপাধি লাভ করেছিলেন। এই পরিবারের অন্যতম মুরুব্বি, গুলফাম ভাইয়ের এক বড় চাচা আব্দুর রহমান বকাউল ছিলেন পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বৃহত্তর মাদারীপুর আসনের সন্মানিত এম, এন, এ। বকাউল সাহেবের বড় ছেলে এম. আজিজুল হক ছিলেন আই জি পি ও ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা। চরভাগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন যথাক্রমে তাঁর এক চাচা খবিরউদ্দিন বকাউল, চাচাতো ভাই মোয়াল্লেমুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মনোয়ার হোসেন বাবু। আরেক চাচাতো ভাই আবদুল কাদির বকাউল ছিলেন অবিভক্ত তারাবুনিয়ার চেয়ারম্যান।
Leave a Reply