
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। চার উপজেলায় সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলা নির্বাচনে সোমবার প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়েছে। ওই দিন চেয়ারম্যান পদে ৯৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৭৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ জনসহ মোট ১৯৮ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।
ইসির অতিরিক্ত সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা) ফরহাদ আহম্মদ খান জানান, বাগেরহাট সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচরে ও ফেনীর পরশুরামে চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এসব পদে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাংগি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান; দিনাজপুরের হাকিমপুরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান; গাইবান্ধার সাঘাটায় চেয়ারম্যান; পাবনার বেড়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান; নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান; মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ভাইস চেয়ারম্যান; কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান; বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে চেয়ারম্যান, রাঙামাটির কাউখালীতে ভাইস চেয়ারম্যান; চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থীরা। যদিও গতকাল বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এ কারণে ওই উপজেলার চেয়ারম্যানকে আপাতত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে না।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে দুই ভাইসহ অপহৃত ও নির্যাতিত হয়ে সারা দেশে সাড়া ফেলে দেওয়া আওয়ামী লীগের কর্মী দেলোয়ার হোসেন পাশা। রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল লতিফ আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে বেসরকারি ভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে বিজয়ী করতে তার অনুসারীরা দেলোয়ার ও তার দুই ভাইকে প্রকাশ্যে অপহরণ করেছিল। এ ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে এমপি মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা পরিষদে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর লুৎফুল হাবিব তার দুলাভাই পলকের নির্দেশনার পর রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সেই সুবাদেই দেলোয়ার হোসেন পাশা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে বিজয়ী হন।
শিবচর (মাদারীপুর) জানান, শিবচর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী থাকায় তিনজনকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সোমবার তিন পদে অন্য সব প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় মঙ্গলবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিবচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ডা. মো. সেলিম মিয়া ও ফাহিমা আক্তার নামে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এদের মধ্যে ফাহিমা আক্তার সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএম আতাউর রহমান (আতাহার) ও মো. মনিরুজ্জামান মনির মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও মো. মনিরুজ্জামান মনির প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে বিএম আতাউর রহমান (আতাহার) একক প্রার্থী হওয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। একইভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আয়শা সিদ্দিকা ও শিফাতুন হক অহনা দুই জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও শিফাতুন হক অহনা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ফলে এই পদেও আয়শা সিদ্দিকাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, রাউজানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন পরপর তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান একেএম এহেসানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, তিনবারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ নুর মোহাম্মদ ও নতুন মুখ রুবিনা ইয়াছমিন রুজি।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র যাচাই- বাছাইয়ের শেষ দিনে নিজ নিজ পদে একক প্রার্থী হিসাবে তারা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। এর আগে ২১ এপ্রিল মনোনয়ন জমাদানের শেষ দিনে তারা একমাত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসব পদে অন্য কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তার বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেন।
Leave a Reply