সব কোচিং বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই উইলস’র শিক্ষক নাসিরের কোচিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত হলে প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ (এমপিও) বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।শিক্ষামন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও থামছে রাজধানীর খ্যাতনামা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক  (দিবা শাখা) নাসির উদ্দিনের কোচিং ও টিউশন বাণিজ্য। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোন শিক্ষক প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবে না বলে পরিপত্র থাকলে তা তো তিন মানছেনই না বরং চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এক মাস কোচিং বন্ধের ঘোষণাকেও পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। তিনি যেন মহা ক্ষমতাধর কোন এক শিক্ষক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র কিংবা নিষেধাজ্ঞা থোরাই কেয়ার করছেন তিনি।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী পিটিয়ে অজ্ঞান করে উল্টো সিগারেট খাওয়ার অপপ্রচার চালিয়ে রাজধানীর খ্যাতনামা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক  (দিবা শাখা) নাসির উদ্দিন (ইনডেক্স নাম্বার D335367) সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিল  ২০২১ সালের অক্টোবরে। তবে সিগারেট খাওয়া কিংবা স্কুল ফাকি দেওয়ার অভিযোগ যে উঠেছিল সেটা ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্য। ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিতেই এসব তথ্য তৎকালীন সময়ে প্রচার করা হয়েছিল। বাস্তবে টিউশন পড়তে না চাওয়ায় ঐ দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলা হয়। প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত পরে স্থায়ী বরখাস্ত এবং পরবর্তীতে বোর্ড থেকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হলেও টিউশন বাণিজ্য থেমে নেই এই শিক্ষকের।  নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন কোচিং বাণিজ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন  উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সন্নিকটে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার ৩৯ চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার চালান। তার কোচিংয়ের জন্য ক্লাস রুটিনে তার পছন্দের শিক্ষককে রুটিনে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। ঐসব শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে ছাত্র সরবরাহ করে থাকে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, এই সুবিধা নেওয়ার জন্য স্কুলটির ধর্ম শিক্ষক দিয়ে গনিত ও ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস দিয়ে থাকেন। শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে কোচিং করেন। গতকাল  সরেজমিনে ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০/২৫ শিক্ষার্থীকে কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে।

কোচিংয়ে কী পড়ানো হয়- শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছুই বলতে রাজি হননি। সরকারি নির্দেশনার পরও কেন শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে- এমন প্রশ্ন করা হয় কয়েকজন অভিভাবককে। তারা উল্টো অভিযোগ করে বলেন, মো. নাসির স্যার সহকারি প্রধান শিক্ষক ছেলেরা ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করেছে এই কথা বলে ডেকে বলে আপনার ছেলেকে টিসি দিব, এই স্কুল থেকে নিয়ে যান। তার রেজিষ্টার খাতায় নাম রোল শ্রেনি সকল তথ্য নিয়ে পরে ফোন করে। পড়লে মাফ পাবে নতুবা ছাত্রকে টিসি দিবে। আমরা বাধ্য হয়ে তার কাছে পড়াই। এছাড়াও ক্লাস রুটিনে সুবিধা দেওয়া শিক্ষকা তার কাছে ছাত্র পাঠান।

তারা আরও বলেন, চলতি বছরের দুই মাস পার হওয়ার পথে, অথচ সিলেবাসের তেমন কিছুই পড়ানো হয়নি। ক্লাসেও ভালোভাবে পড়ানো হচ্ছে না। তাই কোচিংয়ে পাঠানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এজন্য প্রতি মাসে চড়া বেতন দিতে হচ্ছে নাসিরস্যারকে।

নাসির উদ্দিনের কোচিং বানিজ্য নিয়ে কথা হয় স্কুলের দিবা শাখার কয়েকজন শিক্ষকের সাথে । শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, শিক্ষক  নাসিরের কোচিং বাণিজ্যের কথা সবাই জানে। টিসি দেওয়ার কথা বলে, ভয় ভতি দেখায়ে কোচিংয়ে ছাত্র নিয়ে যায়।

আরেক শিক্ষক বলেন, উনার কাছে পরীক্ষার প্রশ্ন থাকে। তার কোচিং এ যারা পড়ে তাদের প্রশ্ন আগে দিয়ে দেয়।

এই বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, একদিন আমার ছেলে মোবাইল দেখে দেখে অংক করছে । আমি জিজ্ঞেস করলে সে থতমত খেয়ে বসে আমি মোবইল চেক করলে দেখি মোবাইলে প্রশ্ন । আমি বললাম এই প্রশ্ন কোথায় পেলে বললো আমার বন্ধু দিছে। আমরি বন্ধু নাসির স্যারের কাছে পড়ে । নাসির স্যার কোচিংয়ের সবাইকে দিয়ে দিছে। পরীক্ষার পরে মিলালাম হুবহু ঐ প্রশ্ন।

এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবকের কাছে নাসির একটা আতংকের নাম। তার অপকর্মর সংবাদ একাধিক পত্রিকায় একাধিক বার প্রকাশ পায়। এছাড়াও এসএসসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফরম ফিলাপ ও পরবতী ক্লাসে প্রমোশনের অভিযোগ আছে। এই অপকমের মাধ্যমে উইলস এ শুন্য হাতে আসলেও  ১০/১২ বছরে রাজধানীতে ৭/৮ টি ফ্লাট ও তার গ্রামের বাড়িতে অলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে কোচিং বাণিজ্যের হোতা শিক্ষ সহকারী প্রধান শিক্ষক  (দিবা শাখা) নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহকারী অধ্যাপক আ. ন. ম. শামসুল আলম খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও বাংলা দেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যের জড়িত থাকার বিষয় গুলো বোর্ডে আসে। এটি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর অথবা মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করার দায়িত্ব। তাদের সাথে কথা বললে তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.