
আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার করে আসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কয়টি আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাঁর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে শেরপুর জেলার শেরপুর-৩ আসনের নির্বাচন। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে প্রধানত লড়ছেন নৌকার প্রার্থী শ্রীবরদী উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী এ.ডি.এম শহিদুল ইসলাম। অন্যদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম।
শেরপুর তিন আসনটিতে (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) এবার ভোটারের সংখ্যা শ্রীবরদী উপজেলা- ২,৩৩,০৬৮ জন ও ঝিনাইগাতী উপজেলা- ১,৪৯,৩৩৬ জন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা জীবন নৌকার পক্ষে থাকা আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম আজ বিদ্রোহী প্রার্থী এবং জীবদ্দশায় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রায় সব নির্বাচনেই নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করা এ.ডি.এম শহিদুল ইসলাম আজ নৌকার মাঝি। এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মতভেদ। দলীয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামীলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এই আসনটিতে নৌকার প্রার্থী দল হিসেবে একক কোন সুবিধা পাবেন না। তাকে ভোটের লড়াইয়ে জিতে আসতে হবে। কেননা দলের নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একদিকে নৌকা অন্যদিকে স্বতন্ত্র ট্রাক। ফলে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বলে নিশ্চিত বিজয় এমন ভাবার কোন অবকাশ নেই।
এই আসনটি নিয়ে আগামীকাল জনগণের কি রায় হতে পারে তা নিয়ে এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন আসনটির সাধারণ ভোটারদের সাথে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে এই প্রতিবেদক। তারা জানান, আগামীকালের ভোট হচ্ছে মুলত আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর। তবে ঝিনাগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান যে পরিমাণ উপজেলায় কাজ করেছে তাতে এই ইউনিয়নে তিনি জিতবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে আমাদের এই ঝিনাগাতী থেকে স্বাধীনতার পর কোন এমপি হয় নাই। ফলে আমরা মনে প্রাণে চাই ঝিনাগাতী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম জয়ী হোক।
ঝিনাইগাতীর কাংশা, ধানশাইল, নলকুড়া, গৌরিপুর, ঝিনাইগাতী সদর, হাতিবান্দা ও মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়ন গুলোতে ট্রাক প্রতিকের আলোচনা সর্বোচ্চ। কোথাও কোথাও নৌকার প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনা হলেও এই ইউনিয়নগুলোর ভোটারদের একটায় চাওয়া ঝিনাইগাতী থেকে এমপি আসুক। তবে উপজেলার সব গুলো ইউনিয়নে একাধিক আওয়ামী নেতাকর্মীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে গেলে দল থেকে কোন সমস্যা না হওয়ায় ঝিনাইগাতীতে ট্রাকের বিজয় সুনিশ্চিত এটা বোঝা যায়। এই আসনে মূলত জাতীয় পার্টি- বিএনপির ভোট ব্যাংক রয়েছে যেটার অধিকাংশ ট্রাক প্রতীক পাবেন।
অন্যদিকে মোটামুটি শ্রীবরদীর কয়েকটি ইউনিয়নে শক্ত অবস্থানে রয়েছে নৌকার প্রার্থী। এর মধ্যে অন্যতম হলো খরিয়াকাজিরচর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সাবেক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান এ.ডি.এম শহিদুল ইসলাম আজ নৌকার মাঝি। অন্যদিকে এ.ডি.এম শহিদুল ইসলাম এই উপজেলার চেয়ারম্যান থাকায় তাঁর নিজস্ব কিছু ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে তা ট্রাক প্রতীককে পেছনে ফেলার মত যথেষ্ট নয় বলে জানালেন শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা এত সহজ হবে না।
শ্রীবরদী উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইমের কোন পোলিং এজেন্ট ডুকতে দেয়া হবে না বলেও প্রকাশ্যে হুমকি প্রদর্শন করে আসছেন নৌকা প্রতীকেরকের কর্মি- সমর্থকেরা। ফলে শেরপুর ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মি সমর্থকরা ৭ জানুয়ারী অনুষ্টিত নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না এ নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছে সাধারণ ভোটারদের। এমনটাই বলছে ট্রাক প্রতীকের সমর্থকরা।
কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের আলোচনা বেশি থাকলেও সাধারণ ভোটররা মূলত ট্রাক প্রতীকের দিকে চেয়ে আছে।
বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত এই দুই উপজেলায় বিএনপির বড় একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। আর এবার এই ভোট ব্যাংকের অধিকাংশ পড়বে ট্রাক মার্কায়। এছাড়াও জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ ট্রাক মার্কাকে সমর্থন দিয়েছেন। আওয়ামীলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীর সমর্থন রয়েছে আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম কেন্দ্রিক। সব মিলিয়ে সাধারণ ভোটারদের হিসেব-নিকেশ অনুযায়ী ট্রাক মার্কার বিজয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন।
Leave a Reply