সাড়ে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছে ব্যাংক

ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে, সেই হারে আমানত পাচ্ছে না। এতে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলে দৈনন্দিন টাকার চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংককে আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানিতে সুদের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। একই সময়ে গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এটি গত ১১ বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে গড় সুদের হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম টেনে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে সব খাতেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। ইতিমধ্যে সরকারের ঋণ গ্রহণের ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে কলমানির সুদের হারও বেড়েছে।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, আগে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে কলমানি মার্কেট থেকে এক দিনের জন্য ধার করত। পরের দিন তা সমন্বয় করে দিত। এখনো তাই করছে। তবে ব্যাংকগুলো এখন কলমানির পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধারও করছে বেশ। এসব অর্থ সহসা ফিরে আসছে না বাজারে। যে কারণে কলমানিতে ধার দেওয়ার সক্ষমতা অনেক ব্যাংকের কমেছে। তবে ধার করার প্রবণতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গতকাল আন্তঃব্যাংক কলমানিতে ১ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি ৫ হাজার ৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যার গড় সুদহার উঠেছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৫২ কোটি, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আন্তঃব্যাংক কলমানির সঙ্গে শর্ট নোটিসে ধারের সুদের হারও বেড়েছে। গতকাল ৩ থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধারের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

এদিকে কলমানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের স্বল্পমেয়াদি ধার করা অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। গত বুধবার রেপো, তারল্য সহায়তা ও স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি উপকরণের আওতায় ১৯ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের দিন এই ধারের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পলিসি রেট বাড়িয়েছে। গত মাসে নীতিগত সুদহার ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সাধারণত পলিসি রেট বাড়ালেই কলমানি সুদহারও বেড়ে যায়।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, পলিসি রেট বাড়ার রিফ্লেকশন হচ্ছে কলমানি মার্কেটে। এখন টাকা আরও টাইট হয়ে যাবে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণপ্রবাহ আরও কমবে। তিনি বলেন, কলমানি মার্কেট ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য সহজে প্রয়োজন মেটানো বা তারল্য ব্যবস্থাপনার একটা মাধ্যম। এখানে রেট বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, ব্যাংকগুলো আরও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে।

বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকে টাকা কম। তাই নিজেদের তারল্য দিয়ে চলছে না। অন্য ব্যাংক থেকে বেশি সুদে ধার নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু ব্যাংক রয়েছে, যারা এমনিতেই দুর্বল, তারাও উচ্চসুদে টাকা নিচ্ছে। যদি সুদহারে সীমা না থাকত, তাহলে কলমানি রেট আরও বাড়ত। তবে মূল্যস্ফীতির এ সময় মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জ রেটেও ছাড় দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধার দেওয়া হয়। ৯১ দিন, ৭ দিন, ৪ দিন, ২ দিন ও ১ দিনের মেয়াদে এই ধার দেওয়া-নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা ধার দেওয়া হয় এক দিনের মেয়াদে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.