বাংলাদেশে অদ্ভুত শাসন চলছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে এক অদ্ভুত শাসন বিরাজমান। এটি এমন এক দুঃশাসন যেখানে এক ব্যক্তির ইচ্ছায় আদালতের কার্যক্রম চলে। এখানে ন্যায়বিচার, বিধিবদ্ধ আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ হয় না। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও এবং আর কোনো মামলা দায়ের না করার উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ইতোপূর্বে নানাভাবে তাকে আটকিয়ে রাখার যে বেআইনি কার্যক্রম দেশব্যাপী প্রত্যক্ষ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ব্যাক ডেট দিয়ে পেন্ডিং মামলায় মুন্নাকে আটকে রাখার পর আবারও উচ্চ আদালতে রিট করলে তাকে মুক্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জেল কতৃর্পক্ষ সম্পূর্ণরূপে নীরব। আব্দুল মোনায়েম মুন্না এ মুহূর্তে সকল মামলা থেকে জামিনপ্রাপ্ত। অথচ তাকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না জেল কতৃর্পক্ষ। তারা বলছে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে মুক্তির নির্দেশনা না পেলে মুন্নাকে ছাড়বে না। এই ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, এ দেশে মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের স্বাধীনতা, কণ্ঠের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক স্বাধীনতা এখন শেখ হাসিনার আঁচলবন্দি। পুলিশ ও আদালত এ ক্ষেত্রে আইনের শাসনের বদলে শেখ হাসিনার চোখ রাঙানিকেই আমলে নিচ্ছে। শেখ হাসিনার চেতনার স্তরে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করা ছাড়া আর কিছু নেই। সুবিচারকে তিনি করেছেন দেশছাড়া। আমি আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকল মানবাধিকার সংগঠনকে উদ্দাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

রিজভী আরও বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে তরুণদের যে ঢল নেমেছে তাতে স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়ায় বিহব্বল শেখ হাসিনা। এতে তিনি স্বৈরতন্ত্রের ক্রমোন্নতির ক্রমাগত বিকাশ ঘটাতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এখন চলছে নানা রকমের উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধি। অবৈধ আওয়ামী সরকারের আদালত তাই উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি নেতাদের সাজা দিতে। নতুন নতুন মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রবাহ আটকে নেই। কারাবন্দি নেতাদের দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখার জন্য প্রহসনের আইনি প্রক্রিয়াও তারা আর অবলম্বন করছেন না। এখন গায়ের জোরেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে। গ্রেপ্তারসহ রিমান্ডের নামে উৎপীড়ন এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালের লিখন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও নীতিকে সমাধিস্থ করে নব্য বাকশালি কতৃর্ত্ববাদের নতুন আদর্শ, নতুন ভাবধারা, নতুন রুচি ও নীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা প্রতি মুহূর্তেই অবলোকন করছি। যেমন উচ্চ আদালতের বিচারপতি বলেন, ‘আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’। গণতন্ত্রের মহান আদর্শ, জীবনের মহান সত্যের পদধ্বনি ওরা শুনতে পাচ্ছে না। ওরা শুধুই পচা, গলিত একদলীয় নব্য বাকশালের কদর্যতা, তুচ্ছতা, হীনতা ও নীচতার হিংস্র দুঃশাসন কায়েম রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। তাই বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে আবারও একতরফা নির্বাচন করতে পুলিশের পাশাপাশি আদালতকে করা হয়েছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসকের পৈশাচিক প্রবৃত্তির লীলাকেন্দ্র।

রিজভী বলেন, এখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় থাকার দিগন্তবিস্তৃত লালসা পূরণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছেন আদালতের বিচারকরা। তাই শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন নিয়ে দাম্ভিক স্বার্থপরতার পক্ষে বিচারকরা কাজ করছেন এবং সেজন্য তারা অত্যন্ত আন্তরিকতা সহকারে জোরেশোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নেতাকর্মীকে সাজানো মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীদের শিখিয়ে পড়িয়ে তাদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। সাক্ষীরা সাক্ষী দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাদেরকে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে এনে জোর করে সাক্ষী দেওয়া হচ্ছে। দেশের অরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার বিচারকার্য শুরু করে ৩/৪ দিন পরপর মামলার তারিখ দেওয়া হচ্ছে এবং রাতেও আদালতের কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের আদালত সারাবিশ্বের মধ্যে ‘আজব আদালত’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। বিরোধী দল নিধনে বাংলাদেশের আদালত আরেকটি ‘আয়না ঘরে’ পরিণত হয়েছে।

রিজভী আরও বলেন, আমরা দ্ব্যর্থকণ্ঠে বলতে চাই- ফ্যাসিবাদ, মানবসভ্যতা ও মানব সংস্কৃতির ক্রমবিকাশের পথে প্রধান বাধা। মূলত, এরা আদিম অরণ্যের অন্ধকারকেই প্রতিষ্ঠিত করে। তবে বলে রাখি- জনগণ কিন্তু গভীর নিদ্রায় অচেতন নয়। গণতন্ত্রের নবজাগরণের স্বরূপ ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের নতুন যুগের জয়যাত্রার পথে ফ্যাসিবাদের ব্যারিকেড ভেঙেচুরে প্রতিষ্ঠিত হবে জনগণের মালিকানা। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত হবে এবং তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন।

এ সময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, শেখ রবিউল আলম রবি, তানভীর আহমেদ রবিন, এস এম জাহাঙ্গীর, আলী আকবর চুন্নু, গোলাম মাওলা শাহীন, ইউসুফ বিন জলিল কালু, মুসাব্বির আহমেদসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.