
ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশে অবৈধ। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন না করার নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আইনি কোনো ভিত্তি না থাকলেও ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণা ও অবৈধ লেনদেন এবং বিদেশে মুদ্রা পাচারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এই অবৈধ কারবারের নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উঠে এসেছে মো. নুরুন্নবী এবং এম মাহামুদুল হাসান রনি নামের দুই যুবকের নাম। নুরুন্নবী এলাকায় পলাশ নামে পরিচিত। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালার কদমতলী গ্রামে। আর মাহামুদুল হাসান রনির বাড়িও একই এলাকায়।
গোয়েন্দা সূত্র ও অনুসন্ধান বলছে, নুরুন্নবী এবং মাহামুদুল হাসান রনি ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়সহ মানি লন্ডারিং ও অনলাইন প্রতারণার অন্যতম হোতা। এ সবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য, নানা ধরনের ছলচাতুরী, কূটকৌশল কিংবা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন নুরুন্নবী। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে তিনি এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক।
নুরুন্নবীই রাজশাহী অঞ্চলের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার মাস্টারমাইন্ড। কয়েক বছর ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ‘টার্গেট’দের প্রতারিত করছেন। অবৈধ অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানি এমটিএফই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির মূল হোতা তরিকুল ইসলামের সমস্ত ডলার কেনাবেচা করেছেন নুরুন্নবী এবং মাহামুদুল হাসান রনি। তরিকুল ইসলাম, নুরুন্নবী এবং মাহামুদুল হাসান রনি একে-অপরের সহযোগী।
অভিযুক্ত নুরুন্নবী একটি গণমাধ্যমের কাছে অবৈধ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লেনদেনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি অবৈধ অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানির পার্পেল ডায়মন্ড ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতি অল্প সময়ে চোখধাঁধানো মুনাফার টোপে ফেলে শত শত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন নরুন্নবী এবং মাহামুদুল হাসান রনি। পিএলসি আলটিমা নামের ওই অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলেও রূপকথার টাকার গাছ বিটকয়েনের কারবার ছাড়েননি এই দুইজন।
জানা গেছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বড় ধরনের একটি সাইবার অপরাধ। সাধারণ মানুষের অনেকেই জানেন না এর মাধ্যমে কত বড় ধরনের প্রতারণা করা যায়। দেশে অনেক আগে থেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারক চক্র সক্রিয়। সমপ্রতি রাজশাহী অঞ্চলে এই চক্র জাল বিস্তার করতে শুরু করে। দেশের আইন অনুযায়ী, বিটকয়েনের মতো যে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ। লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার হলে তা স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট এবং দুর্নীতি বিরোধী আইন লঙ্ঘন করবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন অর্থপাচার হিসেবে বিবেচিত হবে। নুরুন্নবী রাজশাহীতে তাঁর প্রতারণার জাল বিছালেও এম মাহমুদুল হাসান রনি প্রতারণার ফাদ ছিল ঢাকায়। রনি গোপনে প্রতারণা করতেন আর স্বাভাবিক ভাবে রাজধানীর মতিঝিলে একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তবে তাঁর প্রতারণার বিষয়ে জানতে পারলে ইনসেপটা ফার্মাসিটিক্যাল থেকে চাকরি চলে যায়। তবে চারকরি গেলেও তাঁর প্রতারণা থেমে নেই তিনি বর্তমানে রাজধানীর রামপুরায় রেনেটা ফার্মাসিটিক্যালে চাকরি করছেন।
অভিযুক্ত নুরুন্নবী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি কৃষি খামার ও আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করেন। একপর্যায়ে তিনি একটি অনলাইন ক্রিপ্টো ট্রেডিং কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। নিজের ও পরিবারের মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া তিনি যাদের বিনিয়োগ করিয়েছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। তবে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
তবে প্রতারণার বিষয়ে প্রতারক মাহমুদুল হাসান রনির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ফোন নম্বর ব্যবহার করায় মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply