রাজশাহী জেলা আ’লীগ নেতা মাসুদ রানার আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস

রাজশাহীর এক তরুণীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতার আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের মোবাইলে, ম্যাসেঞ্জারে, ইমোতে আপত্তিকর এ ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

ফাঁস  হওয়া ভিডিওটি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুদ রানার । তিনি জেলার চারঘাট উপজেলার চারঘাট ইউনিয়নের বড় বাড়িয়াগ্রামের মৃত তপু মাস্টারের ছেলে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে এবং স্ত্রী একজন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

ভিডিও এবং সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি কক্ষে ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত রয়েছেন ওই নেতা। ওই কক্ষের কোনো এক জায়গা দিয়ে কেউ মাসুদ রানার আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের ভিডিও গোপনে ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

জেলার বিভিন্ন স্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মাসুদ রানার অশ্লীল কর্মকাণ্ডের ভিডিও নিয়ে চলছে আলোচনা- সমালোচনা ও ক্ষোভ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  জেলার এক নেতা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাসুদের চারিত্রিক ত্রুটি আগে থেকেই রয়েছে। জীবনে বেশিরভাগ সময় বিদেশে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনদিন তাকে না দেখা গেলেও অর্থের জোরে বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের পদ। এদের মত মানুষের জন্য আওয়ামী লীগের বদনাম হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি, কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পরিচয় দিয়ে বেড়ানো মাসুদ রানা আদতে ছাত্রলীগের কোন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। দীর্ঘ দিন বিদেশে থেকে এবং দেশে এসে ঠিকাদারি ব্যবসা করে অর্থের বিনিময়ে জেলা আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নেন। ২০১৯ সালে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান মাসুদ রানা। এর আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ, জেলার সহযোগী সংগঠন কোন জায়গাতে সে কোন পদ কিংবা রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়। তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে চারঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  সাধারণ সম্পাদক ও চারঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে কখনও কোন দিন মাসুদ রানাকে আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগ করতে দেখি নাই। এলাকায় ফিরে ইংল্যান্ডে গিয়ে পড়াশুনার কথা বলে দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুর থেকে এসে ঢাকায় নেতাদের পা চেটে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এদের মত নেতাদের কারণে আজ আওয়ামী লীগের দুর্নাম। এদের ভিডিও ফাঁস হবেই। সরকার পরিবর্তন হলে এরাও পল্টি খাবে।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, মাসুদ রানা জেলা আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে আছে। তিনি চারঘাটের মানুষ তবে তাকে কখনও চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কিংবা সহযোগী সংগঠনে রাজনীতি করতে দেখি নাই। আপত্তিকর ভিডিও’র  বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত তবে যেহেতু দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন সেটা জেলা কমিটি  দেখবেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ দারা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, মাসুদ রানাকে আমিও আগে রাজনীতিতে দেখি নাই। তবে দলের সিদ্ধান্তে সে পদ পেয়েছে। এটা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। আপত্তিকর ভিডিও বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, এ সম্পর্কে কিছু জানি না। তবে এমন কিছু ঘটে থাকলে জেলার সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি করা যায়।

উল্লেখ্য,  আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সুমহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইতিহাসের পরতে পরতে সে উড়িয়েছে জয়ের নিশান। এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের যে গৌরব আওয়ামী লীগ বহন করে তা আর কোনো দলের নেই। দল ক্ষমতায় এলেই সুবিধাবাদীরা উড়ে এসে জায়গা করে নেন পাদপ্রদীপে। আর অভিমানে ছিটকে পড়েন দুর্দিনের লড়াকু আদর্শিক কর্মীরা। সূত্র; বাংলা পোষ্ট

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.