
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি সড়কের সংস্কার কাজে বাধা দিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।
হাজার বছরের প্রাচীন সড়কটি এ অঞ্চলের দু’পারের মানুষের হৃদ্যতাপূর্ণ ভাতৃত্বমূলক সম্পর্ক আদিকাল থেকেই। দেশ বিভাজনের পূর্বের অনেকের স্বজন দু’পারে রয়েছেন এখনো। যাতায়াত বা সড়ক যোগাযোগ না থাকলেও মনের হৃদ্যতা কখনো শত্রুতায় পরিণত হয়নি এ অঞ্চলে।
তবুও সড়কটি উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব অলিনগর আমলিঘাট ওবায়দুল হক খন্দকার সড়কটি বর্তমানে বাধার কারণে গত সাত মাস ধরে সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে বাড়বে জনদুর্ভোগ।
সংস্কার কাজ মাঝপথে থেমে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন সড়কটি ব্যবহারকারী কয়েক হাজার বাংলাদেশি। জরুরি খাদ্যশস্য পরিবহন, অসুস্থ রোগী পরিবহনসহ যাবতীয় স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়ে মনবেতর জীবনযাপন করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা।
সংস্কার কাজে বাধা প্রদানের পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি বিএসএফের পক্ষ থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, সাত মাস আগে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ নো-ম্যান্সল্যান্ড এরিয়ায় পড়েছে- এমন অভিযোগ এনে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় আমাদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন ওবায়দুল হক সড়কটি। বাংলাদেশি সীমান্ত বাহিনী বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে সুরাহার মাধ্যমে কাজের অনুমোদন দেয়ার কথা কিন্তু কয়েকবার পতাকা বৈঠক হলেও রাস্তা সংস্কারের কোনো সুরাহা হয়নি।
স্থানীয় হেডম্যান হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনী নদী ভাঙনে শত বছর বয়সী রাস্তাটির বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় নিজেদের অর্থায়নে মেরামত করে চালু রাখা হয়েছিল মানুষের চলাচলের জন্য। বর্তমানে সরকারিভাবে টেন্ডার করে ব্রিক সলিংয়ের কাজ চলছিল। বিএসএফ সংস্কার কাজে বাধা দেয়ার কারণে গত সাত মাস রাস্তাটি বিকল হয়ে আছে।
ফেনী নদীর মাঝ বরাবর থেকে দেড়শ’ গজ ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। সেই হিসেবে ১৫০ গজ হিসাব করলে আমার বাড়িঘর কিছুই নেই, সব নো-ম্যান্সল্যান্ডে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাব এখন?
শতবর্ষী খোরশেদ আলম জানান, প্রতি মাসে দুইবার করে পতাকা বৈঠক হয় বিএসএফ ও বিজিবির। যুদ্ধের ৩ বছর পর থেকেই এই বাড়িতে আছি আমি। কখনো ভারতীয় বাহিনীকে দেখিনি এ রাস্তা নিয়ে কথা বলতে, কিন্তু বর্তমানে তারা রাস্তার কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।
সড়ক সংস্কারের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বীথি বিল্ডকমের অংশীদার ঠিকাদার সেলিম জানান, সাড়ে ১১শ’ মিটার রাস্তার মধ্যে ৫শ’ মিটার রাস্তা নিয়ে বিএসএফ বিজিবি বরাবর আপত্তি করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করে। এতে বিজিবি নোটিশের মাধ্যমে আমাদের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলে এবং পতাকা বৈঠকে সুরাহা করা হবে বলে জানায়। আমরা ঠিকাদারি নিয়ম অনুয়ায়ী এলজিআরডিকে লিখিত জানাই ও বিরোধপূর্ণ এলাকা ব্যতীত বাকি অংশের কাজ সম্পন্ন করি।
স্থানীয় ইতিহাস বিশ্লেষক ডাক্তার জামশেদ আলম জানান, স্বাধীনতার পরও ফেনী নদীর মালিকানা ছিল বাংলাদেশের। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা মুজিব চুক্তিতে ভারত ফেনী নদীতে ভাগ বসায়। সেই অজুহাতে ওই এলাকায় যে কোনো উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান করে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।
করেরহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজাদ উদ্দিন জানান, সড়ক সংস্কারে বাধা প্রদানের পর বিজিবি ও বিএসএফের সঙ্গে বৈঠক হয় কয়েকবার। বৈঠকের ভিত্তিতে বিএসএফ সড়কটি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল। তবে কোনো এক কারণে সেই অনুমতি আবার ফেরত নিয়ে যায় তারা। তবে সাম্প্রতিক একটি মতবিনিময় সভায় বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিএসএফ পুনরায় উক্ত সড়ক সংস্করের অনুমতি প্রদান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, দীর্ঘ সাত মাস ধরে সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় বিষয়টি গত ১৯ মে অলিনগরে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেছি। অহেতুক বিএসএফ আমাদের সড়ক সংস্কারে বাধা দিয়েছে। ফেনী ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. সেলিমুজ্জামান খুব শীঘ্রই বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অলিনগর বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার মাজেদ বলেন, এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতীয় ক্যাম্প কমান্ডার বরাবর চিঠি দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে পতাকা বৈঠক বন্ধ থাকায় বিএসএফের সঙ্গে সমাধান সুলভ আলোচনা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি, অচিরেই চিঠির জবাব আসবে এবং রাস্তা সংস্কার কাজের বাধা উঠিয়ে নেবে বিএসএফ।
Leave a Reply