
নীলফামারীর সৈয়দপুরে দারিদ্র্য সীমার অনেক নিচে জীবনযাপন করেন জিতেন্দ্র নাথ রায় ও নির্মল চন্দ্র রায় দম্পত্তি। তাদের নিবাস উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের শিবেরহাট সরকার পাড়ায় (হিন্দুপাড়া)।
সেখানেই কথা হয় জিতেন (৬০) ও নির্মলের স্ত্রী সুমী বালা রায়ের (৫০) সঙ্গে। তারা জানান, জন্ম থেকেই অন্যের বাড়ির বারান্দা বা উঠানেই তাদের বাস। গলগ্রহ জীবন তাদের। আক্ষেপ করে তারা জানালেন জন্মই যেন তাদের আজন্ম পাপ। এমন দুর্বিষহ জীবন তাদের পড়ন্ত বেলায় এসে ঠেকিয়েছে। তবুও জীবনের শেষ ইচ্ছা আশ্রয়ের জন্য থাকার একটি ঘর। কিন্তু কে দিবে এমন নিশ্চয়তা? স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে শত অণুনয় বিনয় করেও উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের নামে বরাদ্দ হয়নি একটি ঘর।
জিতেন্দ্র নাথ ও তার স্ত্রী সুবলা রানীর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ইতোমধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে ছেলে সবুজ চন্দ্র রায় ও স্বামী, স্ত্রী মিলে অন্যের বাড়ির বারান্দায় রাত্রি যাপন করেন।
অন্যদিকে নির্মল অন্যের জমিতে ছোট ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে স্বামী, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে দিন পার করছেন। ভাগ্যিস তারা তাদের দুই মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন।
সারাটা বছর জীবন কাটে তাদের হা-ভাতে। যেদিন কাজ মিলে সেদিন খাবার জোটে, কাজ না থাকলে থাকতে হয় উপোস। বছরের ৩৬৫ দিনের একদিনও কপালে জোটে না আমিষ জাতীয় খাবার। খেয়ে না খেয়ে থাকায় মধ্য বয়সেই ন্যূজ হয়ে পড়েছে তারা। অপুষ্টিহীনতায় শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ বালাই। বন জঙ্গলের কচু ঘেচুর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয় তাদের জীবন ভর।
সরজমিন এলাকায় গিয়ে কথা হয় গ্রামের বাসিন্দা প্রিয়নাথ রায়, ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়, সুশিলা রানী, রাধিকা রানী রায়, কৃষ্ণারানী রায় ও সঙ্গীত শিল্পী বিনয় কুমার রাজবংশীর সঙ্গে। তারা জানান, ওই দুই দম্পতি সন্তানদের নিয়ে বছরের পর বছর অন্যের কৃপায় যাযাবর জীবনযাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে থাকাই তাদের নিয়তিতে পরিণত হয়েছে।
ওইসব ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাস্তুভিটাহীন গরিব মানুষদের বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরসহ চারশতক করে শাকসবজি চাষাবাদের জন্য জমির মালিকানা দিচ্ছেন। অথচ তাদের গ্রামের ওই দম্পতিদ্বয়ের থাকার জন্য উপজেলার কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘরও মিলছে না। তাহলে দারিদ্র্য সীমার কত নিচে থাকলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মিলবে তাদের ঘর? এসব গ্রামবাসী জিতেন ও নির্মল দম্পতির আবাসন সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাঙ্গালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ডা. শাহাজাদা সরকার বলেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সময় হলে পাবেন। একই বিষয়ে মন্তব্য জানতে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসাইনের সঙ্গে। তিনি জানান, পরবর্তী সময়ে কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্প হলে সেখানে তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।
Leave a Reply