ঘরে খাবার নেই, আন্দোলনে অনড় চা শ্রমিকরা

ঘরে খাবার নেই, তবু আন্দোলনে অনড় চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার মৌলভীবাজারে বেশ কয়েকটি চা বাগানে কাজ হলেও তিনশ টাকা মজুরির দাবীতে আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) অধিকাংশ বাগানেই চলছে কর্মবিরতি। জেলার বড়লেখা, জুড়ি, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা— বিয়ানীবাজার সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকরা। এতে ভূগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।

এখন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানে কাজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে শ্রমিকরা আজ বিভিন্ন চা বাগানের নাটমন্দিরে সভাকরে তারা তাদের নায্য মজুরির দাবী তুলে ধরছেন।

গতকাল মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করার পর মৌলভীবাজারের ১২টি বাগানে কাজে ফিরেন শ্রমিকরা। কিন্তু আজ বুধবার আবারো এসব বাগানসহ জেলার প্রায় সব বাগানেই কাজে যোগ দেননি চা শ্রমিকরা।

৩০০ টাকা মজুরির দাবীতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঢাকা বিয়ানীবাজার ও ঢাকা মৌলভীবাজার সড়ক অবরোধ করে রাখে আন্দোলনরত শ্রমিকরা। এতে বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। ভূগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা উপজেলার দক্ষিনভাগ এলাকায় ঢাকা— বিয়ানীবাজার সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় আটকা পড়ে শত শত যানবাহন।

বিয়ানীবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা যাত্রী ইকরাম মাহমুদ চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ১১টায় গাড়িতে উঠেছেন বড়লেখার দক্ষিনভাগে প্রায় সোয়া ঘন্টা আটকা ছিলেন।

বেলা ২টার দিকে মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলা চৌমুহনীতে জুড়ির বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা ৩০০ টাকা মজুরির দাবীতে

মিছিল করে শ্লোগান দেয়।

শ্যামলী পরিবহরেন চালক তাজুল ইসলাম জানান, জুড়িতে বড়লেখায় ১ঘন্টা ও জুড়িতে দেড়ঘন্টা আটকা পড়েন। সাড় ১১টার গাড়ি শ্রীমঙ্গলে আসতে ২ ঘন্টার স্থলে ৫ ঘন্টা লেগেছে।

এদিকে বিকেল তিনটাকে শ্রীমঙ্গল সাতগাও চাবাগান ফেক্টরির সামনে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে চা শ্রমিকরা। এ বিক্ষোভে শ্রীমঙ্গলের সাইফ, মাকড়ীছড়া, মীর্জাপুর, সাতাগাও, বৌলাছড়া ও ইছামতি সহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা অংশ নেন।

 

সরজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকরা রাস্তার এপার ওপার বাঁশ বেঁধে তাতে বিভিন্ন বাগানের নামে ভেনার ফেস্টুন বেঁধে রাখে। আন্দোলনরত যুবকরা নারী চা শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে চাপাতা ভর্তা তৈরি করে খাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সাঁতগাও চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কাজল কালিন্দি জানান, ১৬দিন হচ্ছে আন্দোলন করছেন। তাদের যৌক্তিক দাবী মালিকরা মানছেন না। তাই বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলন কঠোর করছেন।

আন্দোলনে অংশ নেয়া রাধাকান্ত কৈরী জানান, পেটের জালায় তারা আন্দোলন করছেন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে।

এদিকে বিকেল ৫টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলি রাজিব মাহমুদ মিঠুন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে ৩ ঘন্টা পর বিকেল ৫টার দিকে অবরোধ ছাড়ান।

শ্রীমঙ্গল আমরইল ছড়া চা বাগানের শ্রমিক সন্তান ও মৌলভীবাজার ছাত্রমৈত্রির নেতা অজিত বুনার্জী জানান, আমাদের দাদা, দাদী, মা বাবারা বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একজন সুস্থমানুষ যদি তাদের কষ্ট কাছ থেকে দেখতেন তাহলে তারা সে কষ্ট বুকে ধরাতে পারবেন না। কিন্তু এটা আর কতদিন। এই যাত্রায় আন্দোলন তুঙ্গে। এই আন্দোলনেই অধিকার আদায় করতে হবে। না হলে চা শ্রমিকদের বঞ্চনার ইতিহাস জনম জনমই থাকবে।

তিনি বলেন, জনমভর আমাদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে এখনও তাই। এই আন্দোলন বন্ধ করার জন্যও নিরহ চা শ্রমিকদের নানাভাবে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

চা শ্রমিক সন্তান তাপস ঘোষ জানান, মালিক পক্ষ বলেছে প্যাকেজে ৪০০ টাকার মতো মজুরি। তাহলে বোনাস কতো আসে। বাসস্থানের অধিকার শ্রমিকদের নায্য অধিকার। এটা আবার বেতনের অংশ হয়? তিনি জানান, দুশ বছর এক জায়গায় বসবাস করেও কি এই জমির মালিক বসবাসকারীরা হতে পারেন না?

এ সময় আমরইল ছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রঙ্গন শীল, চা শ্রমিক নেতা সজল বুনার্জী ও সন্তোষ কর্মকার জানান, চা শ্রমিকদের দুর্বলতা রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে আমাদের ঠকাতে চায়। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবই বুঝি। ধানাই পানাই চলবে না। মজুরি বাড়াতে হবে, না হয় আন্দোলন চলবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.