
ফরিদপুরঃ কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটির কাজে ছুরি-চাপাতির সঙ্গে আরও যে জিনিসটি দরকার পড়ে তা হলো গাছের শক্ত গুঁড়ি কেটে বানানো খাইট্টা। ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে এবার একেকটি খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত।
কোরবানির মাত্র একদিন বাকি থাকায় আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি হিসেবে খাইট্টা কিনতে ছুটছেন অনেকে। ঈদ সামনে রেখে পশুর হাট ও মাংসের বাজার এলাকা ছাড়িয়ে শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে এই খাইট্টা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের আগে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী অন্য ব্যবসার পাশাপাশি বিক্রি করছেন খাইট্টা। তারা বিভিন্ন দোকান ও রাস্তার পাশে সেগুলো সাজিয়ে রেখেছেন খরিদ্দারদের জন্য। ঈদেরদিন গরু-ছাগলের মাংস কাটার কাজে ব্যবহার হবে সেগুলো।
শহরতলীর রেলস্টেশন সড়কের প্রবেশমুখের মোড়ে বিক্রির জন্য এমনই কিছু খাইট্টা সাজিয়ে রেখেছেন পাশের চা দোকানি মো. জাফর শেখ। তিনি জানান, আড়াইশো থেকে তিনশো টাকায় এগুলো বিক্রি করছেন। তেঁতুল গাছের গুঁড়ি ছোট ছোট করে কেটে তিনি এ খাইট্টা বানিয়েছেন।
জাফর শেখ জানান, খাইট্টা বানাতে দরকার হয় তেঁতুল কিংবা বেলের মোটা গুঁড়ি। তবে বেল গাছ তেমন না পাওয়ায় এখন বাজারে তেঁতুল গাছের খাইট্টাই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বোয়ালমারী উপজেলার হাসপাতালের সামনে খাইট্টা বিক্রি করছেন বাকা মিয়া। তিনি বলেন, পশুর হাড় ও মাংস কাটতে চাপাতি দিয়ে জোরালো কোপ দিতে হয়। অন্যান্য গাছ দিয়ে বানানো গুঁড়ি এই আঘাত সহ্য করতে পারে না। আবার অনেকসময় মাংস কাটার পর গুঁড়ি থেকে কেটে আসা কাঠের টুকরোও লেগে থাকে। এজন্য খাইট্টা বানাতে বেল বা তেঁতুলের গুঁড়ির কোনো বিকল্প নেই।
ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরের মাংস বিক্রেতা রাজা কসাই জানান, সারাবছর তিনি এই খাইট্টা ব্যবহার করেন। তবে তাদের মতো পেশাদার কসাইদের খাইট্টা আকারে বড় এবং মজবুত। একটি ভালো খাইট্টার দাম হাজার টাকার ওপরে।
মধুখালীর মেগচামির আবুল কালাম বিশ্বাস নামে এক কসাই জানান, লাখ টাকার একটি গরু কাটার জন্য তাকে দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা। গরুর দামের প্রতি ১০ হাজারের জন্য আড়াইশো টাকা করে নেন তিনি। তবে স্থানভেদে এর পরিমাণ কমবেশি হয়।
তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদে পেশাদার কসাইদের পাশাপাশি অন্যরাও উপার্জনের সুযোগ হিসেবে গরু-ছাগল কাটার কাজ করেন। এতে একদিনে ভালো আয়ও হয় তাদের।
বোয়ালমারীর কসাই সাদ্দাম বলেন, একেকজন কসাই একাধিক গরু কাটাকাটি করে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তাদের সহযোগীদেরও কামাই হয় হাজারের ওপর। আবার অনেকে নিজেদের কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস কাটার কাজটি নিজেরাই করে ফেলেন। তবে একাজেও তাদের ছুরি-চাপাতির সঙ্গে অবশ্যই দরকার পড়ে এই গাছের গুঁড়ির খাইট্টা।
আমাদের বাণী/০৯/৭/২০২২/বিকম
Leave a Reply