
ঢাকাঃ বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সদ্যবিদায়ী অর্থবছর পর্যন্ত এ সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে সাত হাজার ১৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২৪ বছরে সেতুটির নির্মাণ ব্যয়ের ১৯২ শতাংশ টোল উঠেছে। আর বিদায়ী অর্থবছর সেতুটিতে প্রথমবারের মতো ৭০০ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে।
সূত্রমতে, করোনার প্রভাব কেটে যাওয়ায় গত অর্থবছর দেশে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল বেড়েছে। এতে ২০২১-২২ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ৭০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেতুতে এটি টোল আদায়ের সর্বোচ্চ পরিমাণ। এর আগের (২০২০-২১) অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছিল ৬৫৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর সেতুটিতে টোল আদায় বেড়েছে ৪৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা সাত দশমিক ৫৯ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় হয়েছিল ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। করোনার কারণে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি থাকায় ওই অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল অনেক কমে যায়। এর প্রভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছর টোল আদায় কিছুটা হ্রাস পায়। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টোল আদায় হয় ৫৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তার আগের অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছর টোল আদায় হয়েছিল ৫৪৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সে বছরই সেতুটিতে প্রথম টোল আদায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়ায়।
এদিকে একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বরে সেতুটিতে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে। ওই মাসে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা টোল। অথচ বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর (এক বছরে) টোল উঠেছিল মাত্র ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২৪তম বছরে সেতুটিতে টোল উঠেছে প্রথম বছরের তুলনায় সাড়ে ১১ গুণ বা এক হাজার ১৫০ শতাংশ।
তথ্যমতে, সেতুটিতে প্রথম টোল আদায় ১০০ কোটি টাকা ছাড়ায় ২০০২-০৩ অর্থবছর। ওই অর্থবছর টোল উঠেছিল ১০৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর চার বছর পর অর্থাৎ ২০০৭-০৮ অর্থবছর টোল আদায় ২০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। ওই অর্থবছর টোল আদায় হয় ২০১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তার তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছর টোল আদায় ৩০০ কোটি এবং আরও তিন বছর পর (২০১৫-১৬ অর্থবছর) টোল আদায় ৪০০ কোটি টাকা ছাড়ায়।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় ৫০০ কোটি ছাড়াতে এরপর আর এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। তবে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়ায় তারও দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর। যদিও তার পরের বছরই (২০১১-২২) টোল আদায় ৭০০ কোটি টাকা ছাড়াল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত নভেম্বরে সেতুটিতে টোলহার ১৭ শতাংশ বাড়ানো হলেও টোল আদায় সে অনুপাতে বাড়েনি। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আগে সেতুটিতে পারাপার হওয়া যানবাহনের ধরন অনুযায়ী ক্যাটাগরি ভিন্ন ছিল। তবে গভেম্বরে ভাড়া বাড়ানোর সময় বিআরটিএ’র (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) নির্ধারিত এক্সেল লোডের ধরন ক্যাটাগরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এতে টোলের হার পরিবর্তনের প্রভাব খুব একটা পড়েনি।
এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায় কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাদের মতে, আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্জলে সড়ক পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কয়েকটি জেলার যানবাহন বিশেষত পণ্যবাহী যান বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘুরে যেত। তবে পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন এ পথে চলাচল করতে পারছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চলাচলের জন্য বাইকের টোল দিতে হয় ৫০ টাকা। আর হালকা যান তথা কার ও জিপের টোল ৫৫০ টাকা এবং মাইক্রোবাস ও পিকআপে (দেড় টনের কম) ৬০০ টাকা। এছাড়া ছোট বাসের (৩১ আসন বা তার কম) টোল ৭৫০ টাকা এবং বড় বাসের (৩২ আসন বা তার বেশি) টোল এক হাজার টাকা। এছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সেতুটিতে ছোট ট্রাকে (দেড় থেকে ৫ টন) টোল এক হাজার টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ থেকে ৮ টন) এক হাজার ২৫০ টাকা এবং বড় ট্রাকে (৮ থেকে ১১ টন) এক হাজার ৬০০ টাকা।
এর বাইরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে তিন এক্সেলের ট্রাকে টোল দুই হাজার টাকা ও চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের টোল হবে তিন হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি সক্ষমতার ট্রেইলারে প্রথম চার এক্সেলের জন্য তিন হাজার টাকা সঙ্গে বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার টাকা করে যোগ হবে।
Leave a Reply