সেবায় মন নেই রেলওয়ের

ট্রেন

ঢাকাঃ মুসলমানদের বড় দুটি উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। বছরের অন্যান্য সময় ট্রেনের টিকেটের চাহিদা কম থাকলেও ঈদের সময় তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে ঢাকার বিভিন্ন স্টেশনে দেখা দেয় টিকেটপ্রত্যাশীদের প্রচণ্ড ভিড়। একটি টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ২০ থেকে ৩০ ঘণ্টা। কিছু স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। স্টেশনে দেখা যায়, কেউ শুয়ে থাকেন, কেউ বসে থাকেন একটি টিকেটের আশায়।

বছরের পর বছর ধরে দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্যে। যাত্রীদের এমন ভোগান্তি দেখেও রেল সংশ্লিষ্টরা টিকেটের চাহিদা মেটাতে কোনো ব্যবস্থা নেন না। টিকেটের তুলনায় যাত্রী বেশি, সক্ষমতা নেই ইত্যাদি বলেই দায় সারেন। গত ১ জুলাই থেকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা ছয়টি স্থানে ট্রেন ও এলাকাভিত্তিক টিকেট দেওয়া হচ্ছে। ভিড় কমানোর জন্য অন্যান্য কাউন্টার বৃদ্ধি করা হলেও টিকেট বাড়ানো হয়নি। ৬টি স্পেশালসহ ঢাকা থেকে মোট ৪৪টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করবে। এজন্য অনলাইন ও কাউন্টার মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৮ হাজার টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে সংখ্যক টিকেটই বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা শুধু বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের প্রতি আগ্রহী। কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে টিকেট ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন প্রয়োগ করছেন না। তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা বড্ড বেমানান। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারে সরকার। কিন্তু সেবায় তাদের মন নেই। তাই এত দুর্ভোগ যাত্রীদের।’

কমলাপুর রেলস্টেশনে কথা হয় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটপ্রত্যাশী দেবাশীষ মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি জানান, ৮ জুলাই রংপুর যাবেন। এজন্য ৩ তারিখে বেলা ১১টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এদিন দেওয়া হয় ৭ তারিখের টিকেট। কিন্তু তিনি লাইন ছাড়েননি। পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত থাকবেন। অর্থাৎ তাকে টিকেট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ২১ ঘণ্টা।

শুধু পুরুষরাই নন, নারীরাও দাঁড়িয়েছেন লাইনে। তাদের জন্য মাত্র একটি কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের লাইনও দীর্ঘ। রাতভর স্টেশনে থাকা নারীদের জন্য বেশ বিড়ম্বনার। শিরিন আকতার, একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। যাবেন রংপুর। তিনি দুই তারিখ রাত ৯টার সময় এসে লাইনে বসেছেন। রাত গেছে, দিন পার করে আবার রাত আসবে তার পর মিলবে টিকেট। অর্থাৎ দুই রাত ও এক দিন অপেক্ষা করাতে হবে। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, একটা টিকেট নিতে গিয়ে ৩৩-৩৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এর মতো কষ্ট মনে হয় না আর আছে। আমরা যদি বাসে যেতাম তাও মনে হয় এত ঘণ্টা জার্নি করা লাগত না। শুধু একটু রিলাক্সে যাব এজন্য এই অপেক্ষা, এই কষ্ট।

রেল খাতের উন্নয়নের জন্য এ বছর ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, এই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে যেন উন্নতি করতে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা কক্সবাজার যাব। বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেল সেতু হচ্ছে, আগামী বছর যদি পদ্মা লিংক ক্রস করতে পারি, তখন পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা কিছু ট্রেন পরিবহন করতে পারব। আমাদের ডুয়েলগেজ ৬০টি কোচ আসছে। আরও ১০০টি পাইপলাইনে আছে। ডাবল লাইন এবং পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমাদের সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। আপাতত মেনে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘বিজ্ঞানের যুগে এত দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে টিকেট কাটা বড্ড বেমানান। এটা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এখন যে কম্পিউটারাইজেশনের কথা বলা হচ্ছে অনেক আগে থেকে সেটা চালু করলে, মানুষের অভ্যাসে পরিণত হতো। প্লেনের টিকেট অনেক আগে থেকেই কেনা যায়। এরকম সিস্টেম করা যায়। বাইরের দেশে যা করে এই সেবাগুলো আউটসোর্সিং করে। আউটসোর্সিংয়ের লোকগুলো চাহিদা অনুযায়ী তারা রোলিং স্টকের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে। কারণ তারা দেখে যে গাড়ি যত চালাব তত লাভ। তখন সে নিজে আগ্রহী হয়, বা পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামে আগ্রহী হয়। তখন সেবার মানও বাড়ে। সূত্র; সময়ের আলো

আমাদের বাণী/০৪/৭/২০২২/বিকম

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.