গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৫ শতাংশ

ঢাকাঃ করোনার পরবর্তী বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের ১৫ শতাংশ কমেছে।

করোনাভাইরাস সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে অর্থনীতির প্রতিটি সূচক বিধ্বস্ত হলেও চাঙ্গা ছিল দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির রথ থেমে যায়। পুরো অর্থবছরের ১২ মাসে (জুলাই-জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে হঠাৎ যে উল্লম্ফন হয়েছিল, তার একটি ভিন্ন পেক্ষাপট ছিল। ওই বছরের পুরোটা সময় কোভিডের কারণে গোটা পৃথিবী বন্ধই ছিল বলা চলে। সে কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোও বন্ধ ছিল। প্রবাসীরা সব টাকা পাঠিয়েছিলেন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সে কারণেই রেমিট্যান্স বেড়েছিল। আর কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবং কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেশি থাকায় এখন আগের মতো অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তাই বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম এসেছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স কম এসেছে আগের অর্থবছরের তুলনায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১৮৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪০ কোটি ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬৫ কোটি ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৯৪ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সে সরকারি প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। দেশে বড় অংকের রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে তার বিপরীতে প্রণোদনা পেতে হলে আয়ের উৎস দেখিয়ে নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হতো। সম্প্রতি সে শর্তও শিথিল করা হয়েছে। তার পরও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো কমেছে।

রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে গত অর্থবছরে তরতর করে বেড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু আমদানি ব্যয়ে অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পাশাপাশি রেমিট্যান্স আয় কমে যাওয়ায় রিজার্ভে সংকুচিত হয়ে এসেছে। গত ২৮ জুন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

যদিও চলতি বিদায়ী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে রেমিট্যান্সে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছিল, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু পুরো অর্থবছরের প্রবাসী আয় কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে রিজার্ভের পরিমাণ।

আমাদের বাণী/০৩/৭/২০২২/বিকম

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.