বন্যা বিস্তৃতির শঙ্কা

ঢাকাঃ উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আর এর ফলে নতুন করে আরো কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আজ রোববার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আর নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর সবগুলোরই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানসমূহে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারেও বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের ১০৯টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৭৮ টির পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৬ টি হ্রাস ও দুইটি অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই সময়ে টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, সুরমা, কুশিয়ারা, ঘাগট এবং সোমেশ্বরী নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। তবে সারিগোয়াইন, খোয়াই, পুরাতন সুরমা ও কংশ নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সুরমা নদীর তিন পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার উপরে। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টের পানি ১৪৩, সিলেট পয়েন্টে পানি ৬২ এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের হাতিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৮৬, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৩, চিলমারী পয়েন্টে ৩৪, ফুলছড়িতে ২৯, দুধকুমারের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১০, ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২৮, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ৭, যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ২৪, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ২৮, কাজিপুর পয়েন্টে ২৩, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৩, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টের পানি ১৬০, শেওলা পয়েন্টে ৬৩ ও ঘাগটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৫ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের বিষয়ে কেন্দ্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটের জাফলং-এ ৩১৭ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেট পয়েন্টে ৩১৫, সিলেটের লালাখালে ৩১১, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণবাগ পয়েন্টে ২০৫, লাটুতে ১৭৫, কানাইঘাটে ১১০, জকিগঞ্জে ১৯৩, শেওলায় ১১৫ এবং সুনামগঞ্জে ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের আসামের শিলচরে সর্বোচ্চ ২৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চেরাপুঞ্জিতে ২৫৩ এবং মিজোরামের আইজলে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আমাদের বাণী/১৯/৬/২০২২/বিকম

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.