
ঢাকাঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় আজ রেকর্ড পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। এতে ওই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
শনিবার (১৮ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ২৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে, ১৩৫ মিলিমিটার কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ১২৭ মিলিমিটার ময়মনসিংহে, নেত্রকোনায় ২০৬ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৮৮ মিলিমিটার ও সিলেটে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ভারি বৃষ্টির কারণে সিলেটের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় শনিবার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, এমন ভয়াবহ বন্যা আগে দেখেনি কেউ। এক রাতেই ডুবে গেছে সব। হঠাৎ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট, সুনামগঞ্জের জনজীবন। সুনামগঞ্জ শহরে কোনো বাড়িতে পানি উঠতে বাকি নেই। সদরের পাশাপাশি দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলা ভাসছে বন্যায়। পানি ঢুকেছে সিলেট শহরেও।
এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। এ দুই জেলার ১০ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। চারদিকে থইথই পানি; কিন্তু খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। বিদ্যুৎ নেই, তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার। কাজ করছে না মোবাইল নেটওয়ার্কও।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বন্যাক্রান্ত উপজেলাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রানওয়েতে পানি উঠে পড়ায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সিলেটের সঙ্গে আকাশপথের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এই বন্যায় সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এসব মানুষ। হয় পানি সাঁতরে, নয়তো নৌকায় চেপে আশ্রয়স্থলে ছুটছে মানুষ। অনেকে কলাগাছের ভেলায় চেপেও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের বাঁচাতেই যখন হিমশিম অবস্থা, তখন গবাদিপশু নিয়ে আরও বিপাকে পড়েছে কৃষি পরিবারগুলো।
বন্যাকবলিত এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার কারণে সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণকাজে নেমেছে সেনাবাহিনী। আর সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে বিকালে জরুরি ভার্চুয়াল সভা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ঢাকা থেকে আজ শনিবার মেডিকেল টিম যাচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে।
ভারতের মেঘালয়-আসামে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট অঞ্চলে। বুধবার থেকে ব্যাপক পরিমাণে উজানের পাহাড়ি ঢল নামা শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়। এদিন বিকাল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। তলিয়ে যায় পথ, মাঠ, ঘাট।
আমাদের বাণী/১৮/৬/২০২২/বিকম
Leave a Reply