
রোজিনা কী চুরি করেছিল সে তথ্য আমরা কেউ জানিনা। মামলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য চুরি করে অন্যদেশে পাচারের আইনে। অথচ আমরা যতটা বুঝতে পারি রোজিনা কৌশলে কোন তথ্য যদি নিয়েও থাকে সেটা কারো ব্যক্তিগত জীবন যাপনের তথ্য নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম বা অদক্ষতা সংক্রান্ত তথ্য। এটা রাষ্ট্রের স্বার্থেই সবার জানা দরকার। যে কাজটা আসলে সাংবাদিকেরই।
একটা সত্য ঘটনা বলি। বছর পাঁচেক আগে এক জেলা শহরের কারাগার থেকে অপরাধী পুত্রকে জেলারের সহায়তায় বের করে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিচ্ছিলেন এক রাজনীতিক। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে পুত্রকে আবার কারাগারে রেখে আসেন। জেলা শহরের এক রিপোর্টার গানের দলের নাচনেওয়ালী সেজে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলে আনেন। পরদিন পত্রিকায় সেই ছবি প্রচার হলে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল। তথ্য চুরির দায়ে তাঁকে কিন্তু জেলে যেতে হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ববউড ওয়ার্ড এবং কার্ল বাস্টেইনের ওয়াটার গেট ফাঁসের গল্পতো সবার জানা। আমেরিকার মত একটি দেশের সকারই পড়ে গেলো যে রিপোর্টে। এরকম শত শত রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় আমেরিকা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ছোট্ট শহরেও। কাজটি সাংবাদিকদের। রোজিনার পূর্বসুরীরাও করতো উত্তরসূরীরাও করবে।
প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে রোজিনার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ কেন? এর আগে কী কখনো তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আছে? আমি একজন সাংবাদিক হিসাবে বলতে চাই, অকারণে আমাদের নানা দপ্তরের কর্মকর্তারা তথ্য লুকাতে চান। এমন কী কথা বলতে বললেও বলেন, কথা বলা মানা। বিশেষ করে সেটা যদি কোন অনিয়ম সংক্রান্ত হয়ে থাকে।
ঢাকায় নিয়মিত সাংবাদিকতা করছি ২২/২৩ বছর। এর আগে ঢাকার বাইরে। এখন দায়িত্ব নিয়ে একটি কথা বলতে পারি৷ সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের এমন কোন তথ্য প্রকাশ করে না, যাতে নিজের দেশের ভাবমূর্তি খারাপ হয়। এমন কী আমরা যদি বুঝি এই তথ্যটি প্রচার হলে সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে, তাহলে সেই খবর দেই না। আমার একজন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক প্রায়ই বলেন, বার্তা সম্পাদক প্রতিদিন যে পরিমান খবর ফেলে দেন, তা দিয়ে আরেকটি পত্রিকা বের হতে পারে। এটা বার্তা সম্পাদকের সেলফ সেন্সরশিপ।
বড়দের কাছে শোনা গল্প এবং নিজের দেখা সত্য মিলিয়ে বলতে পারি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কোন গণবিরোধী অবস্থান নেননি। তাহলে আজ জেলে কেন রোজিনা? আমারতো মনে হচ্ছে বাংলাদেশের পুরো সাংবাদিকতাই কারাগারে আটকে রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে এনেছিলেন প্রমিথিউস। মানুষের কল্যাণে সেই আগুন আজ ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন খুব জানতে ইচ্ছে করে কী তথ্য আনতে গিয়েছিলেন রোজিনা? আমি না দেখেও বলতে পারি সেটাও করোনা মোকাবেলায় যুদ্ধরত মানুষের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আর হামলে পড়া কর্মকর্তাদের জন্যে ছিলো ক্ষতিকর। তাই রোজিনার মুক্তি যেমন চাই, তথ্য লুকানো কর্মকর্তার শাস্তিও চাই প্রকাশ্যে।
লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Leave a Reply