
ঢাকাঃ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম চালু না হওয়ায় ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প। এই বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক টিআরএম চালু, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নদী পুনঃখনন কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি।
জানা গেছে, জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তালা উপজেলার ঘোনা হাইস্কুল মাঠে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসমাবেশে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপোতাক্ষ খননের ওয়াদা করেন। পরে ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগে কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) নামের একটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদন করেন। ২৬১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৩ হাজার প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে এবং সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে।
প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল- ৯০ কিলোমিটার নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেসরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন। পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ১৫ লাখ অধিবাসী।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৪ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ২ বছর অতিবাহিত হলেও আজও পর্যন্ত টিআরএম বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে, ২০২০ সালে জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ওঠে যায়। ভেসে যায় ফসলীক্ষেত, মৎস্য খামার এবং চলাচলের রাস্তা। বাঁধের ভগ্নদশায় পরিণত হয়। এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবির মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে বিগত ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেধে দিয়ে টিআরএম বন্ধ করা হয়, যা এখনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির কারণে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ। বিল অধিবাসীদের বক্তব্য পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ উপকৃত হলেও তাদের দুঃখ-দুর্দশা ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি চলমান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিআরএম বিল অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
এসময় পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার, ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নদী পুনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সব মহলের নিকট পানি কমিটি, সুশিল সমাজ, সর্বস্তরের জনগণ জোর দাবি জানান।
ভুক্তভোগি বালিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ মোড়লের ছেলে আব্দুল আলিম মোড়ল, শাহাজাহান সানার ছেলে ফিরোজ সানা জানান, তাদের ৮ বিঘা জমি টিআরএম বিলে আছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের টাকা সরকারের নিকট থেকে বুঝে পেয়েছে। এরপর ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি পাননি। অনেকবার সাতক্ষীরা ডিসি অফিসে যোগাযোগ করেছে কিন্তু ডিসি অফিস থেকে একটাই উত্তর এসেছে ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো জমা হয়নি, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান জানান, কপোতাক্ষ খননের প্রথম ফেইজের ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার এবং দ্বিতীয় ফেইজের ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা সরকার বরাদ্দ দিলেও ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিআরএম এলাকার চাষিরা প্রথম দুই বছরের ক্ষতিপূরণ পেলেও পরবর্তী সময়ে আর পাননি।
তিনি আরও জানান, ডিসি অফিসে খোঁজ নিয়ে যানা যায় যে দ্বিতীয় ফেইজের টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড জমা না দেওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিপূরণ দিতে পারছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, ‘ঠিকমতো ক্ষতিপূরণের টাকা না পাওয়ায় পাখিমারা বিলের কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় ফেইজে নদী খনন ৫০ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। ডিসি অফিসে আমাদের টাকা জমা আছে, আরও টাকা জমা দেওয়া হবে। চাষিরা পর্যায়ক্রমে এই টাকা পেয়ে যাবে।’
আমাদের বাণী/১৪/৬/২০২২/বিকম
Leave a Reply