উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ শতাংশ কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবি

ঢাকাঃ আসন্ন বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ শতাংশ কৃষিখাতে বরাদ্দ চায় সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট। এছাড়াও ধান ও অন্যান্য ফসলের লাভজনক দাম এবং আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালুসহ ১২ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে বুধবার (১ জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সমাজতান্ত্রিক খেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ।

আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, শফিউর রহমান, আদিবাসী নেতা রবিউল টুডু। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন কৃষক ফ্রন্টের দপ্তর সম্পাদক নিখিল দাস। সমাবেশ শুরুর আগে গণসংগীত পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কুষ্টিয়া জেলার সংগঠক আব্দুল মান্নান। সমাবেশ শেষে প্রেস ক্লাব থেকে মিছিল শুরু হয়ে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান ঘুরে সচিবালয়ের গেটে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে সংগঠনের নবনির্বাচিত সহসভাপতি অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, সহকারী সাধারণ সম্পাদক নিখিল দাস, দপ্তর সম্পাদক জুলফিকার আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিবকে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক এখনো কৃষি কাজে নিয়োজিত। করোনাকালে এ খাত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মানুষদের বাঁচিয়ে রেখেছে। অথচ এটিকে অবহেলা করা হচ্ছে। কৃষি খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমছে। সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অভিনাথ মারান্ডি ও রবি মারান্ডির আত্মহত্যার ঘটনায় নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচসহ কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ভেজাল সার, বীজে বাজার সয়লাব। কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। এবছর সরকার সাড়ে ৬ লাখ টন ধান, সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার কথা বলছে। সরকার কৃষকের স্বার্থ না দেখে চালকল মালিকদের স্বার্থে চাল বেশি কিনছে। আমরা মৌসুমে ৫০ লাখ টন ধান প্রতি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র খুলে ১২শ টাকা মণ দরে কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করার জোর দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, কৃষি-কৃষক ক্ষেতমজুর না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। ফলে ক্ষেতমজুরদের জন্য সারা বছরের কাজ ও আর্মি রেটে রেশন দিতে হবে। ডিজিডি, ভিজিএফসহ সকল গ্রামীণ প্রকল্পের দুর্নীতি-দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করাসহ কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর-আদিবাসীদের উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ কৃষি খাতে বরাদ্দ দিতে হবে।

কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশের ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কৃষক বন্যায়-খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ১০-২০ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় সার্টিফিকেট মামলায় ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় হয়রানির শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দেওয়াসহ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ সুদসহ কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। কৃষকদের শস্য বীমা চালু, নদী-খাল-জলাশয়ের দখল-দূষণ বন্ধ এবং আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিতসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে অন্যান্যরা কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান; চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তারা ভিজিএফ, ভিজিডি, কর্মসৃজন প্রকল্পসহ সামাজিক সুরক্ষা খাতে উপকারভোগীর আওতা বাড়ানো ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দলীয়করণ, দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান। কৃষি ভিত্তিক শিল্প, বন্ধ পাটকল, চিনিকল অবিলম্বে চালু, গ্রামীণ ক্ষেতমজুর-কৃষকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করারও দাবি জানান বক্তারা।

সমাবেশে গত ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজকে সভাপতি, অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ, জয়নাল আবেদীন মুকুল, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনকে সহ-সভাপতি, আব্দুল কুদ্দুসকে সাধারণ সম্পাদক, নিখিল দাসকে সহকারী সাধারণ সম্পাদক, গোলাম রব্বানীকে সাংগঠনিক সম্পাদক, জুলফিকার আলীকে দপ্তর সম্পাদক, শফিউর রহমানকে অর্থ সম্পাদক, এডভোকেট আব্দুল কাইয়ুমকে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

আমাদের বাণী/০২/০৬/২০২২/টিএ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.