
ঢাকাঃ বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ কয়েক মাদক কারবারী ডেমরার গলাকাটা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ২০ মে এমন খবরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগ। অভিযানে মোসাঃ তৈয়্যবা বেগম, তার সন্তান পরিচয় দেয়া ১১ বছরের শিশু তামান্না আক্তার ওরফে রিপা মনি ও ভাই আব্দুল্লাহর স্ত্রী মোসাঃ ইয়াছমিনকে আটক করা হয়। তবে তাদের কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু ডিবির কাছে তথ্য রয়েছে, আটককৃতদের কাছে ইয়াবা রয়েছে। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এক্স-রে করানো হয়। এতে শিশু রিপা মনি ও ইয়াছমিনের পেটের ভেতর কিছু একটা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। একপর্যায়ে ওষুধ খাওয়ালে রিপা মনির পেট থেকে স্কচটেপ মোড়ানো ৭৮০ পিস এবং ইয়াছমিনের পেট থেকে ৭২০ পিস ইয়াবা বড়ি বেরিয়ে আসে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ডিবি বলছে, গ্রেফতার তৈয়্যবার চার বোন, এক ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এমনকি বাবাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা পুরো পরিবার দীর্ঘ ৪/৫ বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে। তারা রোহিঙ্গা। বিভিন্ন সময়ে মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে নিজেদের নাম এবং বাড়ি-ঘরের ভুল ঠিকানা দিত। মিয়ানমার থেকে নদী পথে আসা ইয়াবা ট্যাবলেট সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে এভাবে বিক্রি করত। একেক সময় একেক বোন ইয়াবার চালানগুলো নিয়ে আসত। ডেমরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে আশপাশের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পর চলে যেত টেকনাফে। আবার আরেক বোন আরেকটি চালান নিয়ে আসত। পথিমধ্যে কোথাও যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহের চোখে পড়তে না হয়, তাই সঙ্গে আনা হতো শিশুদের। রিপা মনির মতো প্রায়ই শিশুদের ইয়াবা ট্যাবলেট খাইয়ে পেটের ভেতর করে চালান নিয়ে আসতো। তবে ডিবির বিভিন্ন সময়ের অভিযানে একে একে ধরা পরতে হয়েছে এই মাদক স¤্রাজ্ঞী চার বোন, এক বোনের স্বামী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে। এই ছয়জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
২৮ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত একে একে এই শিশুসহ এই সাতজন ডিবির জালে ধরা পড়ে। সর্বপ্রথম ২৮ মার্চ তৈয়্যবার বোন শারমিন ওরফে সাইদা ওরফে জোবায়দা ও সাবিকুন নাহারকে ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ ডেমরা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম। পরের মাসের ২০ তারিখে দেড় হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় তৈয়্যবা, তার শিশু সন্তান পরিচয় দেয়া রিপা মনি ও ভাবি ইয়াছমিনকে। সর্বশেষ সোমবার ফাতেমা আক্তার ওরফে শারমিন নামের আরেক বোনকে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার স্বামী রুবেলও সঙ্গে ছিল। টেকনাফের ১নং ওয়ার্ডের শ্যামলাপুর এলাকায় তাদের বাড়ি বলে জানানো হয়। তবে ডিবি টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়ে নিশ্চিত হয়েছে যে, ওই ঠিকানায় গ্রেফতারকৃতদের নামে কোন বাড়ি-ঘর নেই। এমনকি যেসব নাম বলে তারা পরিচয় দিয়েছে, সে সব নামে ওই এলাকায় কোন ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি। ডিবি বলছে, গ্রেফতারকৃতরা মূলত রোহিঙ্গা। বহু বছর আগে তারা বাংলাদেশে এসেছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অল্প সময়ের জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে এভাবে মাদক ব্যবসা করে আসছে। কখনও মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে বাড়ি-ঘরের ঠিকানা এমনকি নিজেদের ভুল নাম বলে। সর্বপ্রথম ২৮ মার্চ গ্রেফতার হওয়া শারমিন তার নাম একেক বার একেকটা বলে। পরে তদন্ত করে ডিবি জানতে পারে, তার আসল নাম সাইদা। প্রথমে সে সাইদা পরিচয়ে নুরুল কবির নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। পরে সেই নাম লুকিয়ে জোবায়দা নামে খুলনাতে আরেকটি বিয়ে করে। তার বড় বোন তৈয়্যবার ৬ সন্তান। তৈয়্যবাও তার স্বামী ও ৬ সন্তানকে রেখে ছোট বোন সাইদা ওরফে জোবায়দার স্বামীকে বিয়ে করে। গ্রেফতার হওয়া ফাতেমা আক্তার ওরফে শারমিনও দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্বামী রায়হানকে ডিভোর্স না দিয়েই রুবেল নামের এক যুবককে বিয়ে করে।
সোমবার রুবেলসহ গ্রেফতার হয় ফাতেমা। মার্চ মাস থেকে একে একে ৪ বোন গ্রেফতার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, চার বোনের এক ভাই আব্দুল্লাহ। সেও কক্সবাজারে মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের মা মারা যাওয়ার পর বাবা ফজলুল হক ওরফে শামসুল হক ওরফে আলী আহম্মদ ফুলকলি নামে এক নারীকে বিয়ে করে। তার বাবা ফজলুল হকও মাদক ব্যবসা করে। মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলেও আব্দুল্লাহ ও ফজলুল হক পলাতক রয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিবি উত্তরা বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহিদুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরাসহ আশপাশের এলাকায় এসব মাদকদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃতরা ডেমরা এসে অবস্থান নিত। বিক্রির আগেই তাদের মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে যারা মাদক ক্রয় করত, তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুরো পরিবারের এই চক্রটি মাদক ব্যবসায় শিশুদের ব্যবহার করত।
আমাদের বাণী/০২/০৬/২০২২/টিএ
Leave a Reply