
ঢাকাঃ দীর্ঘ ৫৭ বছর প্রতিক্ষার পর অবশেষে আজ বুধবার (০১ জুন) ভারতের পশ্চিমবাংলার শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) স্টেশন হতে চিলাহাটি স্টেশনে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন আসবে।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের এলাকার মানুষের খুব বেশি একটা সুবিধা হবে না। তাই চিলাহাটিসহ গোটা জেলার মানুষের উৎসাহ ও উদ্দীপনার চেয়ে হতাশা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। এলাকাবাসী চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশনসহ যাত্রী উঠা-নামার দাবি করছেন।
ট্রেনটির প্রথম যাত্রা শুরু হবে ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের নিউ জলপাইগুড়ি (এনজিপি) স্টেশন হতে। মিতালী এক্সপ্রেস ১ জুন ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী অ্যাড: নুরুল ইসলাম সুজন অনলাইনের মাধ্যমে উদ্বোধনের পর নিউ জলপাইগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করবে।
চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন বলেন, ‘মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকছে ১০টি তাপানুকূল কোচ। এর মধ্যে চারটি করে মোট আটটি এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি চেয়ারকার কোচ থাকবে। বাকি দুটি জেনারেটার ও ব্রেকআপ ভ্যান থাকবে। এসি বাথের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ভ্রমণকরসহ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি চেয়ারকারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বাংলাদেশ অংশে ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে। ভারতের অংশে টিকিট মিলবে কলকাতার ফেয়ারলি প্যালেস ও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত মিতালী এক্সপ্রেসের রেলপথ দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কিলোমিটার।
ট্রেনটি দিনের বেলা ৪৫৬ আসন নিয়ে এবং রাতে ৪০৮ আসন নিয়ে চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হলদিবাড়ী হয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত পার হবে মিতালী। এরপর বাংলাদেশের চিলাহাটি, নীলফামারী, পার্বতীপুর, হিলি, সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী বাইপাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে। একইভাবে ট্রেনটি নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছাবে।
মিতালী এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ছাড়বে সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার আর ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে রবিবার ও বুধবার।
ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছাবে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। একইভাবে ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে, ভারতে পৌঁছাবে পরের দিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে। যাওয়া ও আসার পথে চিলাহাটি স্টেশনে ইঞ্জিন পরীক্ষা ও পানির নেওয়ার জন্য ৩০ মিনিট চিলাহাটি স্টেশনে অবস্থান করবেন। তবে এ সময় ট্রেন হতে কোন যাত্রী ওঠা-নামা করতে পারবে না।
এ পথে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের আয়ের বাংলাদেশের রেলওয়ে বিভাগ ৮০ শতাংশ আর ২০ শতাংশ পাবে ভারতীয় রেলওয়ে বিভাগ পাবে।
চিলাহাটি এলাকার বাসিন্দা লিটন ইসলাম বলেন, ‘চিলাহাটি থেকে চিকিৎসার জন্য আগে বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী দিয়ে আমরা ভারতে যেতাম। এতে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় নষ্ট হতো। এ জন্য আমরা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল পথটি পুনরায় চালুর জন্য দীর্ঘ দিন হতে আন্দোলন করছি। অবশেষে আমাদের আন্দোলন সফলও হলো। তবে আমরা এর কোন সুফল পাচ্ছি না। তিনি চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও যাত্রী ওঠা-নামার দাবী জানান।
আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে আগে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনও চলাচল শুরু হলো। এটা খুবেই খুশির খবর। আমরা ব্যবসায়ীরা এ পথে ভারত হতে অনেক পণ্য নিয়ে আসি। তবে ভারতের ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের যোগাযোগের জন্য মাঝেমধ্যে ভারতে যেতে হয়। এ পথে ভারতে যেতে চাইলে, আমাদের ঢাকায় গিয়ে টিকেট কেটে সেখান হতে উঠতে হবে। এতে আমাদের সময় ও অর্থ দুটোই বেশি খরচ হবে জরুরি প্রয়োজনে আমরা দ্রুত যেতে পারবো না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ি পথে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন এবং ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর থেকে মালবাহী ট্রেন চলাচল করলেও করোনাভাইরাস ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল।
আমাদের বাণী/০১/০৬/২০২২/টিএ
Leave a Reply