কোতোয়ালির সাবেক ওসির এত সম্পদ!

ময়মনসিংহঃ জেলার কোতোয়ালি মডেল থানার প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরওয়ার এবং তার ৩ পুত্র ব্যবসায়ী এনামুল হক মাসুম, প্রভাষক নাজমুল হক মারুফ ও ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মামুনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

গত শনিবার ও রোববার এই দুই দিনে পিতা ও ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে আলাদা ৪টি মামলা দায়ের করেছেন দুদকের সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল। মামলায় ৩ কোটি ৪৫ হাজার ৩৫৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে গোলাম সরওয়ারের এক কোটি ৮৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, পুত্র এনামুল হকের ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৭ টাকা, নাজমুল হক মারুফের ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৮ টাকা ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ২৯ লাখ ২ হাজার ৯২৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে।

পুলিশের কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া এই ওসি ময়মনসিংহ কোতোয়ালি ও ভালুকা মডেল থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় সম্পদের এই পাহাড় গড়ে তোলেন। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার ১০ তলা সৌহার্দ্য টাওয়ারের ১২টি ফ্ল্যাট ও রাজধানী ঢাকার আদাবরের শেকেরটেক শ্যামলী হাউজিংয়ে ৮ তলা আলিশান বাড়ি ছাড়াও ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর, বলাশপুর ও চুরখাই ছাড়াও টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নিজ গ্রামে রয়েছে অগাধ সম্পদ। মামলা দায়েরের ফলে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন ওসি গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্র। যদিও রোববার দিনভর গোলাম সরওয়ারকে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রকাশ্য দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, দুদকের দায়ের করা আলাদা ৪ মামলাতেই গোলাম সরওয়ারকে আসামি করা হয়েছে। আসামি গোলাম সরওয়ারের বড় ছেলে এনামুল হক মাসুম পেশায় ব্যবসায়ী, মেজ ছেলে নাজমুল হক মারুফ জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নয়ারহাট সাভার ঢাকার প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ও ছোট ছেলে মঞ্জরুল হক মামুন সহকারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সুপার স্ট্রাকচার টিএএ-জেবি এমআরটি লাইন-০৬ ঢাকা মাস রেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে কর্মরত বলে জানা গেছে।

দুদক গোলাম সরওয়ারের আয় বহির্ভূত সম্পদের তালিকা হাতে নিয়ে তদন্তে নামে কোভিড পরিস্থিতির আগে। যেখানে গোপন করেও অর্জিত সম্পদের সঠিক হিসেব দিতে পারেনি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাখী গ্রামের মৃত মনির উদ্দিন সরকারের ৩ পুত্রের মধ্যে বড় গোলাম সরওয়ার কনস্টেবল হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন।
জানা গেছে, গোলাম সরওয়ার ঢাকার আদাবরের শেকেরটেক এলাকার শ্যামলী হাউজিং এর ৬ নম্বর সড়কে বি-৪৮ হোল্ডিংয়ে ৮ তলা বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

ফ্ল্যাটের বেশির ভাগ ভাড়া দেয়া হয়েছে। ঢাকার আদাবরের মতো এলাকায় জায়গা কিনে ৮ তলার বাড়ি করতে ২০-৩০ কোটি টাকা কী করে পেলো পুলিশ সেটিই বড় রহস্য।

ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার ১০ তলা সৌহার্দ্য টাওয়ারে নিজ ও ৩ পুত্র এনামুল হক মাসুম, নাজমুল হক মারুফ ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ১২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ সবের বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে ৪ শতাংশ জমিতে বাড়ি, বলাশপুর এলাকায় ১৫ শতাংশ জমি, শিকারীকান্দা এলাকায় ২০ শতাংশ জমি এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পাশে ২০ শতাংশ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গোলাম সরওয়ার।

গোলাম সারোয়ার বলেন, পরিবার ও শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেছি। পেনশন থেকে ১ কোটি ৫২ লাখ পেয়েছিলাম। আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। আমার আয়করে উল্লেখ আছে। পরিবার এতো জমি কোথায় পেলো, হিসেবের চেয়ে বেশি অর্থ কোথা থেকে আসলো এ বিষয়েও কোনো সদুত্তর দেননি অভিযুক্ত কর্মকর্তা। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এই অভিযুক্ত কর্মকর্তা সর্বশেষ গত ২০১৫-২০১৬ সালে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) হিসেবে অবসরে যান। এই নিয়ে মানবজমিনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

আমাদের বাণী/৩১/৫/২০২২/বিকম

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.