
ঢাকাঃ রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ স্থাপনে হেমায়েতপুর-ভাটারা রুটে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০ কিলোমিটার এ মেট্রোরেলের সাড়ে ছয় কিলোমিটার উড়ালপথে। বাকি ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে। নকশা প্রণয়ন শেষে দেখা গেছে, এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
তথ্যমতে, ঢাকায় তৃতীয় মেট্রোরেল হবে এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুট। এটি হেমায়েতপুর থেকে বলিয়ারপুর, বিলামালিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর-আমিনবাজার অংশটি হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। বাকি অংশ হবে মাটির নিচে তথা আন্ডারগ্রাউন্ড।
এ রুটে ১৪টি স্টেশন থাকবে, যার মধ্যে ৯টি মাটির নিচে ও ৫টি উড়ালপথে হবে। এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটটির নির্মাণকাজ ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী সিভিল ওয়ার্ক ও রোলিং স্টক (ইঞ্জিন-কোচ) সরবরাহ-সংক্রান্ত আটটি প্যাকেজে বিন্যস্ত ছিল। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ হাজার ৯৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তব কাজ সম্পাদনের সুবিধার্থে বেসিক ডিজাইন ও আংশিক ডিটেইল ডিজাইনের ভিত্তিতে প্রকল্পটি ১০টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অ্যাপরাইজাল মিশনে গৃহীত হয়েছে।
প্যাকেজগুলো পুনঃবিন্যাসের পর বিভিন্ন প্যাকেজের ব্যয় পুনরায় প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
এদিকে প্রকল্পটির জন্য ১০৪ দশমিক ৫১ একর জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। তবে বেসিক ডিজাইন ও আংশিক ডিটেইল ডিজাইনের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, আরও ২৪ একর জমি বাড়তি দরকার পড়বে। অর্থাৎ মোট জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন হবে ১২৮ দশমিক ৫১ একর। তবে ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত তিন হাজার ২৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকাতেই তা হয়ে যাবে। বাড়তি কোনো অর্থ দরকার হবে না। বর্তমানে ৯৯ দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, প্রথম প্যাকেজে ডিপিপির আওতায় ডিপো নির্মাণের জন্য ২২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কথা ছিল। আর ইমব্যাংকমেন্টের উচ্চতা ধরা হয়েছিল তিন দশমিক ১০ মিটার। ডিপো উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৯ হেক্টর। আর ইমব্যাংকমেন্টের উচ্চতা ধরা হয়েছে পাঁচ দশমিক ৮০ মিটার। এতে ডিপোর জমি উন্নয়নে ব্যয় ধরা দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৯৪ কোটি সাত লাখ টাকা।
যদিও অন্যান্য প্যাকেজে নির্মাণব্যয় কমছে। এর মধ্যে ডিপোর সিভিল ও বিল্ডিং নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৪৭৩ কোটি সাত লাখ টাকা, যা কমে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ২১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মেট্রোরেল উড়ালপথের অংশ ও স্টেশনে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
মেট্রোরেলের মাটির নিচের অংশ ও স্টেশনগুলো নির্মাণে তিনটি প্যাকেজ রয়েছে। এগুলোয় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৫৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে নতুন হিসাবে এ ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এছাড়া ইলেকট্রিক ও মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছিল চার হাজার ৬০৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৩০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৯৩০ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা কমে দাঁড়াচ্ছে তিন হাজার ২৫০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
এর বাইরে ট্রাক ওয়ার্কস ও এএফসি নতুন দুটি প্যাকেজে প্যাকেজ যুক্ত হয়েছে। এগুলোয় ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৭৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ও ২১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ২৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, ডিপোজিট ওয়ার্ক এক হাজার কোটি টাকা, পরামর্শক ব্যয় এক হাজার ৮০১ কোটি ৬২ লাখ টাকা, সিডি/ভ্যাট এক হাজার ৮৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও নির্মাণকালীন সুদ দুই হাজার ৮৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ দেয়ার কথা ২৯ হাজার ১১৭ কোটি চার লাখ টাকা। বাকি ১২ হাজার ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটির নকশা প্রণয়নসহ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে জাপানের নিপ্পন কোয়েই কোম্পানি লিমিটেড এবং ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড। সূত্র; শেয়ার বিজ
আমাদের বাণী/৩০/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply