
ঢাকাঃ বিদ্যালয়ের পাঁচ কক্ষে এসএসসির প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থী। একই সময়ে বিদ্যালয় মাঠে চলছে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। চতুর্দিকে মাইকের বিকট আওয়াজে মনঃসংযোগ রাখতে পারছিলেন না শিক্ষার্থীরা। বিরক্ত হয়ে পরীক্ষা হল ছেড়ে বের হয়ে আসেন অনেকে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিলেও তা কর্ণপাত করার কেউ ছিল না সেখানে।
রবিবার (২৯ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাবনার বেড়া উপজেলা সদরের সরকারী বিবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। সম্মেলন আয়োজনে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও বন্ধ রাখা হয় বলে একাধিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১১টায়। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা মাঠে সমবেত হন। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে পাশের ভবনে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি পরীক্ষা নেয়া হয় বিকট মাইকের আওয়াজের মধ্যে।
রবিবার সকালে বেড়া সরকারী বিবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোকসেদুল আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় (ভার্চ্যুয়াল) সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কার্যকরী সদস্য সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু প্রমুখ। তবে এ সম্মেলনে অগঠনতান্ত্রিক ভাবে কাউন্সিলর তালিকা প্রণয়ন ও কেন্দ্রীয় নেতারা না আসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বয়কট করেন।
বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগেই ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, রবিবার ক্লাস হবে না। তবে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা সকাল ১০টার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে শুরু হয় বেলা ২টা থেকে। অনেকে সম্মেলনের মাইকের আওয়াজে পরীক্ষা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও শিক্ষকরা তাদের বুঝিয়ে শুধু খাতায় সাক্ষর করে যেতে বলেন। তবে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, অন্য কোনো মিলনায়তন, খোলা স্থান বা বেড়া স্টেডিয়ামে সম্মেলনের আয়োজন করা হলে ভালো হতো। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ছুটি বা প্রচণ্ড শব্দের মধ্যে পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।
তারা বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের চরম সমস্যা হয়।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করেন, সরকারী দল এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবেন বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে, আমাদের কথা কেউ ভাবেন না বলেও অভিযোগ তাদের।
বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন কতটুকু যৌক্তিক এবং বিকট শব্দের মধ্যে এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা কীভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, জানতে চাইলে বেড়া সরকারী বিবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আশরাফ বলেন, আমাদের কিছু করণীয় নেই। আর আমরা তো পরীক্ষা নিচ্ছিই।
এত শব্দের ভেতর কীভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি আর কোনো কথা না বলে চলে যান। অন্য শ্রেণিতে ক্লাস না হওয়ার বিষয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিন বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই, আমাকে কেউ জানায়নি। তবে বিদ্যালয়টির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার, ওনার সঙ্গে কথা বলুন।
তবে সম্মেলন চলাকালে এসএসসি প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নেয়া যৌক্তিক হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. সবুর আলী বলেন, আমি ছিলাম না, কেউ এ বিষয়ে আবেদনও করেননি। আমি পাবনায় একটি ট্রেনিংয়ে আছি, তবে আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে সম্মেলন আয়োজক স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু ও পৌর মেয়র আসিফ শামস রঞ্জনের বক্তব্য জানতে তাদের ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।
আমাদের বাণী/৩০/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply