
ঢাকাঃ অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে শেষ হয়েছে সরকারের বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। এই সময়ে সারা দেশে ৮৮২টি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ক্লিনিক পাওয়া গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। আর সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে উত্তরের বিভাগ রংপুরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার বাইরে অভিযান কিছুটা নির্দিষ্ট তালিকা ধরে হলেও রাজধানীতে ছিল অগোছালো। ঢাকায় ঠিকমতো অভিযান চালাতে পারলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো। তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাদ যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অভিযান হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মে সারা দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র তিন দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। ঢাকার বাইরে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে নিবন্ধিত ও অননুমোদিতের তালিকা থাকলেও প্রতিনিয়ত নামে-বেনামে বহু ক্লিনিক গড়ে ওঠায় সেই তালিকার অপর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে রাজধানীতে সেই জটিলতা আরও বেশি। হালনাগাদ তথ্য না থাকায় অধিকাংশ এলাকাতেই এখনো অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে উত্তরা ও মোহাম্মদপুরে কোন অভিযানই হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে গত ৭২ ঘণ্টায় হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক টিম। গত শুক্রবার থেকে আজ রোববার পর্যন্ত চলা এসব অভিযানে ৮৮২টি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ ২২৯টি। আর সবচেয়ে কম ১৪টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে রংপুরে। এ ছাড়া রাজধানীর ১২ টিসহ ঢাকা বিভাগে ১৬৭টি, খুলনায় ২০৪টি, ময়মনসিংহে ৯৬টি, রাজশাহীতে ৭৮টি, বরিশালে ৫৯টি এবং সিলেটে ৩৫টি।
অভিযান নিয়ে স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘যেসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন নেই, তাদেরকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিন সময় দিয়েছিলাম। এই সময়ের মধ্যে বন্ধ না করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমরা তদারকি করেছি। তবে বন্ধ করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বেআইনিভাবে সবার অগোচরে গড়ে উঠতে না পার সে জন্য অভিযান আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।’
বেলাল হোসেন বলেন, ‘অভিযানে ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে এবং রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তিনটি টিম কাজ করেছে।’
এদিকে ঢাকার বাইরে অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধের এই অভিযান জোরালোভাবে চললেও রাজধানীতে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। রাজধানীতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি অন্তত পাঁচ হাজার হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীতেও সমানভাবে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও তা চোখে পড়েনি।
প্রথম দুদিন যেখানে ঢাকার বাইরে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে এই সময়ে কোনো অভিযানই হয়নি রাজধানীতে। শেষ দিন রোববার উত্তর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ধোলাইপাড়ার মত কিছু এলাকায় অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকে বলে অভিযোগ আসে, সেসব স্থানে তিন দিনেও অভিযান চালানো হয়নি। উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডিতে শেষ দিনে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও হয়নি।
কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিনটি টিম অভিযান চালিয়েছে। লোকবল সংকটের কারণে এর চেয়ে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের তালিকা হালনাগাদ না থাকায় সেটি আরও জটিল হয়েছে। তবে যেহেতু অভিযান অব্যাহত থাকবে, তাই যেকোনো সময়ে এসব এলাকায় অভিযানে নামা হবে।
এদিকে আজ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের নেতৃত্বে এসব এলাকায় চলা অভিযানে নিবন্ধন না থাকা ও অনিয়মের দায়ে পাঁচটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর খবরে রোগীকে কক্ষে রেখে পালিয়ে যান এক ‘ডাক্তার’। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোগীকে উদ্ধার করে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
শেষ দিনে ঢাকার বাইরেও অভিযান চলেছে। এদিন পটুয়াখালীর ফরিদপুর, মাগুরা, পঞ্চগড়, বাগেরহাট, কুড়িগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট ও যশোরসহ অন্তত ১৫টি জেলায় অভিযানে অর্ধশত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার বালার নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তিন দিনে জেলার মোট ২১টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বাগেরহাটে অবৈধভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা পরিচালনার অপরাধে ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা এবং ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন।
আমাদের বাণী/২৯/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply