
ঢাকাঃ বাতাসে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় খুব দ্রুত হারে বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রতিবছরই দেশে তীব্র হচ্ছে গরম। গ্রীষ্মে শুরুতেই হঠাৎ ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা, মাত্রাতিরিক্ত আদ্রতায় ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৪৫ ডিগ্রি অনুভূত হওয়া ও রাজশাহী অঞ্চলে মরুর ‘লু হাওয়া’র বয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতাকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সরাসরি দায়ী না হলেও এর থেকে পুরোপুরি উত্তরণ নিজেদের হাতে নেই বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নির্গত মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস দেশের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে যথাযথ এখন থেকেই সর্বাত্মক পদক্ষেপ না নিলে ২০৩৭ সাল নাগাদ দেশে এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর ২০৫১ সাল নাগাদ তা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন, উষ্ণায়নের গতি বেড়ে যাওয়ায় আসছে বছরগুলোতে হঠাৎ খরা আরো কম সময়ের ব্যবধানে হতে পারে। এমনও হতে পারে হঠাৎ করে দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই এমন খরার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন রাজশাহী অঞ্চলে যা ঘটে গেল তা হঠাৎ খরার কারণেই ঘটেছে। পদ্মা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে এবছর বয়ে গেছে মরুর লু হাওয়া। তাপমাত্রা উঠেছে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। হঠাৎ তীব্র তাপ প্রবাহের ঘটনা ঘটবে এমন পূর্বাভাস আবহাওয়া অফিস থেকে দেওয়া হয়নি।
বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছে সুপরিচিত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনস। ‘ইনক্রিজড লেবার লসেস অ্যান্ড ডিক্রিজড অ্যাডাপটেশন পটেনশিয়াল ইন আ ওয়ার্মার ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক যৌথ গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনসহ স্বনামধন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
নিবন্ধটিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতাও। যা বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশেও ঘটছে। পরিবেশে একই সঙ্গে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বেশি থাকা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এমন গরম আবহাওয়ায় শরীরে ঘাম হয়। ঘাম শুকিয়ে শরীর দ্রুত শীতল হওয়ার সুযোগ কমে যায়। অতি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে কাজ করা কৃষক ও শ্রমিকদের শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তারা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন অসুস্থতা হার্ট অ্যাটাক ও হিট স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটে। ফলে বাড়ে মৃত্যুঝুঁকি।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সম্পাদক ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরিফ জামিল সময়ের আলোকে বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নির্গত মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ দেশের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে গ্রীষ্মে দেশে গড় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছতে পারে ৪৬ ডিগ্রি পর্যন্ত। রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে পুরো মরুভূমির অবস্থা চলে আসতে পারে। তাই এর থেকে কিছুটা মুক্তি জন্য এখনই ওইসব অঞ্চলে ব্যাপক হারে সবুজায়ন শুরু করতে হবে। পদ্মায় পনি প্রবাহ স্বাভাবিক করে চরগুলোতে বৃক্ষায়ণ শুরু করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে শিল্পকারখানা পরিবেশ বান্ধব করার পাশাপাশি যানবাহনের নির্গত কার্বন মনো অক্সাইড অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলেও বনায়নও জরুরি। নইলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের যে ধরণের ভয়াবহ গরমের সম্মুখীন হতে হবে তা থাকবে সহ্য সীমার বাইরে।’
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যা ও খরার প্রবণতা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ, যদিও এর জন্য বাংলাদেশ খুব একটা দায়ী না। বৈশ্বিক মাত্র ০.৫৬ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।
আমাদের বাণী/২9/৫/২০২২/বিকম
Leave a Reply