মাঙ্কিপক্সে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে তরুণরা

ঢাকাঃ সম্প্রতি উত্তরণ হওয়া মহামারী করোনায় কোয়ারেন্টাইনের সময় ছিল ১৪ দিন। করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের অন্তত ২ সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবে বিশ্বজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসলে ৩ সপ্তাহ অর্থাৎ ২১ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তরুণদের মধ্যে। ১০ থেকে ৪০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি থাকা ভাইরাসটির আক্রান্তদের উপসর্গের বেশিরভাগই থাকে মুখে। শুধু তাই নয় স্মলপক্সের টিকা নেয়া থাকলেও মাঙ্কিপক্স হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে বলা হচ্ছে, ভাইরাসটিতে সমকামীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এক গবেষণার প্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু সমকামী নয় অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাসটিতে। তাই মুখ, যৌনাঙ্গ, পায়ুপথে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করা এই ভাইরাসটি থেকে দূরে থাকতে করোনার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ তাদের।

শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মিলন হলে, হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সংগৃহীত বিভিন্ন দেশের মাঙ্কিপক্সের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে করা এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘মাঙ্কিপক্স প্যানিক অর রিয়েল থ্রেট’ শীর্ষক বিজ্ঞানবিষয়ক সেমিনারে গবেষণাটির প্রবন্ধ তুলে ধরেন ঢামেক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তানজিদা রুবায়েত। গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী স্মলপক্সের টিকা জোরদার না হওয়ায় তরুণদের মধ্যে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে স্মলপক্স টিকার বাইরে থাকাদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি ১০ থেকে ৪০ শতাংশ। শুধু তাই নয় সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া বেশি কাজ করায় তরুণদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। তারা একসঙ্গে খেলাধুলা করে, ফলে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যায়।

এ সময় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ টিটো মিঞা বলেন, আমরা যারা ছোটবেলায় স্মলপক্সের টিকা নিয়েছি, তাদের খুশি হওয়ার কারণ নেই। টিকা নেয়া থাকলেও নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি। গর্ভবতী নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের আরও সতর্কভাবে রাখতে হবে। তবে এ পক্স নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। টিটো মিঞা বলেন, বিশ্বের কয়েকটি দেশে এটি ছড়ালেও আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। আইইডিসিআর শনাক্তকরণে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি গাইডলাইন রয়েছে। যেহেতু এখনও আমাদের দেশে আসেনি, তাই নিজস্ব গাইডলাইন আপাতত ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেহেতু এটা তরুণ ও শিশুদের মধ্যে বেশি ছড়ায়, তাই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুলতানা শাহানা বানু বলেন, করোনায় যেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছি, একইভাবে এটি প্রতিরোধেও মানতে হবে। এখন পর্যন্ত স্মলপক্স ভ্যাকসিনই এটিতে কার্যকর হিসেবে আছে বলেও জানান তিনি।

সেমিনারে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজমুল হক বলেন, হজের পর হাজীরা দেশে ফিরলে তাদেরও টেস্ট করাতে হবে। আবার আসন্ন ঈদেও বর্ডার দিয়ে বিভিন্ন গবাদি পশু আমাদের দেশে আসবে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন পশুর মাধ্যমে এটা ছড়িয়ে না পড়ে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎকসরা বলছেন, বাংলাদেশে তো এর পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই এতে আক্রান্ত কেউ যেন বন্দরগুলো দিয়ে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেক্ষেত্রে নিতে হবে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। এদিকে ইতোমধ্যে ভাইরাসটি দেশে শনাক্ত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে একটা শ্রেণী। যা বন্ধের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণীর একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দুটি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান। রোগটির বিভিন্ন লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। প্রথম পর্যায়ে রোগীর জ্বর আসে, পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয় ফোস্কা ও অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি ওঠে। পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের তালুতে।

উৎপত্তির ইতিহাস ॥ গত শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি এবং সুইডেন এই ১২টি দেশে অন্তত ৯২টি মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। পরে রবিবার ইসরাইল ও সুইজারল্যান্ডও ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাস সংক্রমণের কথা জানা যায়। ফলে, এই ভাইরাল রোগ বর্তমানে বিশ্বের মোট ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এটি বাংলাদেশে প্রবেশরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কিভাবে সংক্রমিত হয় ॥ কোন সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়াতে পারে।

আমাদের বাণী/২৮/৫/২০২২/বিকম

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.